আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
আমার কাছে মনে হয় উম্মতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির সবচেয়ে বড় কারণের একটি হচ্ছে জবানের লাগামহীন ব্যবহার। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আমাকে কেউ একটা কিছু বললে, তাকে আমার প্রতিউত্তর দিতেই হবে এমন মনোভাব আমাদের তৈরি হয়ে গিয়েছে। এছাড়া গীবতের মত বড় কবিরা গুনাহ তো আছেই। শাশুড়ি বউ কে নিয়ে বলছে, বউ শ্বাশুড়ি কে নিয়ে। মা, ছেলে মেয়ের কাছে ফুফুর বদনাম করছে। ফুফু তার ছেলে মেয়ের কাছে মামীর বদনাম করছে। এভাবে জবানের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে গুনাহ, সেই গুনাহ শেষ হচ্ছে কবরে পৌঁছে। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কুরআনে বলেছেন,
“ অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা অনর্থক কথা কর্ম থেকে বিমুখ। ” (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১,৩)
বিনা প্রয়োজনে আমরা অনেক কথা বলে থাকি, আর এই কথা হয়ে দাঁড়ায় সকল গুনাহের কেন্দ্রবিন্দু। মতভেদ, গীবত,হিংসা, ঝগড়া, মারামারি, প্রতিটা কাজের পিছনে দায়ী মানুষের লাগামহীন জবান। আমি ছোটবেলা থেকেই একটু বেশি কথা বলতাম কিন্তু একটা সময় বুঝতে পারলাম এই কথার দারা আমি মানুষকে আঘাত করছি, গীবত করছি, নিজেকে ছোট করে ফেলছি । কলেজ ভার্সিটি তে এগুলো বেশি হয়। স্যার ম্যাডাম এর নামে গীবত, ক্লাসমেট দের নামে গীবত, এক বন্ধুর অবর্তমানে আরেক বন্ধুর সামনে সেই বন্ধুর গীবত। এগুলো খুবই কমন কলেজ ভার্সিটিতে। কিন্তু একদিন মনে পড়ল নবী সা. এর সেই হাদীস –
“আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?” লোকেরা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জানেন। তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।” বলা হল, আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও কি গীবত হবে?) তিনি বললেন, “তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।” [মুসলিম ২৫৮৯, তিরমিযি ১৯৩৪, আবু দাউদ ৪৮৭৪, আহমদ ৭১০৬, ৮৭৫৯, ২৭৪৭৩, ৯৫৮৬, দারেমি ২৭১৪]
“অন্য আরেক হাদীসে এসেছে রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে, অর্থাৎ গিবত করবে, কিয়ামতের দিন গিবতকারীকে পচা মাংস ভক্ষণ করতে বাধ্য করা হবে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে।” (বুখারি)
একদিন একটা সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি যাদের সাথে উঠাবসা করি তাদের সবাইকে একত্রিত করলাম। জবানের হেফাজত নিয়ে আলোচনা করলাম। এবং আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম কেউ কারো অবর্তমানে তার নামে কিছু বলব না। যখন যে উপস্থিত থাকবে শুধু তার বিষয়েই আলোচনা হবে। যে উপস্থিত নেই তাকে নিয়ে কোন প্রসঙ্গেই আলাপ আলোচনা করব না। এরপর থেকে আমাদের ফ্রেড সার্কেল এর প্রত্যেকেই এটা মেনে চলার চেষ্টা করি। যদি প্রতিটা মানুষ এই কাজ টুকুও করতে পারে তাহলে এই উম্মতের পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন গুলো ঠিক হয়ে যাবে আমি বিশ্বাস করি।