“পাঁচ বন্ধু, উমর, আলি, আহমেদ, বিজয় ও কামাল। তাদের মধ্যে বিজয় ও কামাল হিন্দু হলেও বন্ধুত্বের গভীরতা বেশ অনেক। উমর সবাইকে রামাদানে ইফতারের দাওয়াত দিলে একদিন সবাই উপস্তিত হয়। হিন্দু হলেও কামাল ও বিজয় বরাবরই ইসলাম নিয়ে অনেক আগ্রহী। কথায় কথায় উমর সবাই এক সাথে হজ্বে যাওয়ার প্রস্তাব রাখে। এতে বিজয় বলে, “হ্যাঁ, আমি যেতে চাই। তোমরা আমার ভাইয়ের চেয়ে কম নও, তোমাদের সাথে মিশার পরে ইসলাম নিয়ে আমার অনেক ভুল-ভ্রান্তি ঠিক হয়েছে, পাশাপাশি তোমাদের ধর্ম যে শান্তির তাও আমি উপলব্ধি করতে পারি। তাহলে এবার চলো তোমাদের সর্বপ্রধান পবিত্র স্থান ঘুরে আসা যাক।” প্রতিউত্তরে কামাল বলে, “তোমার সাথে আমিও একমত, একবার পরিদর্শন করলে তো খারাপ হয় না।” উমর তখন বললো, “তাহলে সবাই যাচ্ছি ইনশা আল্লাহ?” সবাই প্রতিউত্তরে হ্যাঁ বলার আগেই আলি বললো, “হে আমার বন্ধুসব আমাকে ক্ষমা করো, আমি যেতে পারছি না।” উমর তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় তার পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। তখন উমর আলিকে বলে, “তুমি কি আমাকে ভাই মনে করো না? আমার রক্তের ভাই নেই, তা নিয়ে আফসোসের অবকাশ রাখি না কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তোমাদের দিয়েছেন আমাকে। তোমরা জান্নাতের উদ্দেশ্য যুদ্ধের পথের সাথী, তোমাদের হক আমার উপর ফরজ নয় কি? আমি তোমাকে এই ১০ লক্ষ টাকা উপহার দিলাম, এই সম্পদ তোমার। হজ্বে যাওয়ার জন্য এখন তুমি সাবলম্বী, এখনও কি যেতে চাও না?” আলি তখন উমরকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো এবং বললো, “ইয়া উমার, মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকার ব্যবস্থা হচ্ছিলো না বলে উনার হজ্বের জন্য বাচিঁয়ে রাখা জমি বিক্রি ছাড়া উপায় দেখছিলাম না। তখন আল্লাহ তায়ালার কাছে দোআ করেছিলাম ব্যবস্থা করে দিতে, দেখো তিনি আমাকেও হজ্বে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন। হে উমর তুমি শুধু ভাই নও, হতে পারো না, তুমি আল্লাহর নিকট হতে উত্তম উপহার।” কামাল ও বিজয় শুধু অবাক হয়ে দেখলো ভ্রাতৃত্বের গভীরতা যে রক্ত ছাড়াও গভীর হয়। অপরদিকে আহমেদ নিরব ছিলো। খাওয়া শেষে সবাই তখন নিজেদের বাড়ির উউদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। আহমেদ রাস্তায় হাঁটছিলো আর ভাবছিলো, “ইয়া আল্লাহ, উমরের মনে এতো উদারতা রক্তটান ছাড়াই, তবে আমি কেনো সামান্য কিছু টাকার জন্য নফসের ধোকায় পরে নিজের ভাইয়ের সহিত এমন জঘন্য আচরণ করলাম? আপনি কি এর মাধ্যমে দেখিয়ে দিলেন, আমি ঠিক কোন অবস্থায় আছি, আমার কি ক্ষমা চাওয়া উচিত নয়?” ঠিক তখন তার বড় ভাই আহাদ তার কাছে এসে হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, “হে আমার ভাই ক্ষমা করো, তোমার ভাতিজার অসুস্থতার কারণে সময় মতো তোমার টাকা ফেরত দিতে পারিনি।” আহমেদ তখন টাকাটা তার আহাদের হাতে দিয়ে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো এবং বললো, “এসব কিছু না ভাই আমার, তুমি তো আমারই ভাই। ঝগড়াঝাটি সবাই করে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু তোমার মতো এভাবে মিটমাট করতে যারা চাই আল্লাহ তো তাদেরই সুসংবাদ দিয়েছেন।”” এভাবে তারা আরো কথার মাধ্যমে সব মিটমাট করে নেয়। প্রকৃতপক্ষে ঐক্য তো নিজ ঘরে, নিজ আত্বীয়দের সাথে সুসম্পর্কের মাধ্যমেই গড়ে উঠে। এরপর তারা সব বন্ধু হজ্বে গেলে কামাল ও বিজয় ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি করতে পেরে ইসলাম গ্রহণ করে। আর সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেয় দায়ী হয়ে ইসলামকে সেবা দেয়ার এবং মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবানের। পরিশেষে তাদের এই দলকে তারা নাম দেয় “মুসলিম উম্মাহর ঐক্য”।।।। “