উম্মতের ফিকির ৩

উম্মতের ফিকির কি?
ফিকির মানে চিন্তা, ভাবনা, দরদ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক বহিঃপ্রকাশ

এটি আমাদের প্রিয় নবী (সা:) থেকে পাওয়া এমন এক নিয়ামত যেটার কথা বলতে গেলেই হয়ত চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। আমাদের মুসলিম ভাই বোনেরা যখন ইসলামের ছায়াতল থেকে বের হয়ে যায়,তখন তাঁদেরকে দ্বীনের রাস্তায় ফেরানোর জন্য অন্তরে তাদের জন্য দরদ রেখে দাওয়াতি কাজ করাই হলো উম্মতের ফিকির।

উম্মতের ফিকির কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা রাসূল (সা:) এর জীবনাদর্শ থেকে জানা এবং তার সাহাবী, এরপর তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী,সালাফ এবং ইমামগনের জীবনী থেকে আমরা ফিকির সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিতে পারি।

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ইসলামের খলিফা ছিলেন। যিনি ৬১৬ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন।
উমর (রাঃ) বাগ্মী ব্যক্তি ছিলেন। জনগণের মনে স্থান করে নেয়ার জন্য তার এই দক্ষতা সাহায্য করেছে।
সমস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য ফিকির ছিল তাঁর অবর্ণনীয়।
শাসক হিসেবে উমর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। ফিদাকের জমির ব্যাপারে তিনি আবু বকরের নীতির অনুসরণ করেছেন এবং একে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহারের নীতি চালু রাখেন।
রিদ্দার যুদ্ধে কয়েক হাজার বিদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীকে দাস হিসেবে বন্দী করা হয়েছিল। উমর (রাঃ) এসকল বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং তাদের মুক্তির নির্দেশ দেন।

আল্লাহ ওলি,
হযরত উসমান হারুনী র. একবার ইশার সালাতের পর তার শিষ্যদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করলেন আগামীকাল ফজরের ওয়াক্তে যে ব্যক্তি জামায়াতে আমার সাথে ফজরের সালাত আদায় করবে সে হবে জান্নাতি। কিন্তু এই খবর যে প্রচার করবে সে হবে জাহান্নামি। উপস্থিত শিষ্যরা আনন্দিত হলো এই ভেবে যে সালাত আদায় করলেই জান্নাতি হবে। কিন্তু আবার চিন্তিত হয়ে যাচ্ছে যদি তার দ্বারা কেউ জেনে যায় সে তো জাহান্নামি হয়ে যাবে। তাই তারা ঠিক করে রাতে ঘরেই ফিরবে না আল্লাহর জিকির এবং তাহাজ্জুদ আদায় করে কাটিয়ে ফজরের নামাজ উস্তাযের সাথে আদায় করবে। কিন্তু এক শিষ্য হযরত খাজা মাইনুদ্দীন চিশতী র. আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন “হে আমার রব, আমাকে আপনি ফজরের আগ পর্যন্ত হায়াত দিন যাতে করে আমার উস্তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া সুসংবাদ আমি আমার ভাইদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। যথা সময়ে আজান হওয়ার পর খাজা মাইনুদ্দীন চিশতী র. মসজিদ থেকে বের হয়ে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের প্রত্যেকের দুয়ারে দুয়ারে যেয়ে নামাজের জন্য মসজিদে আহবান করে। ইকামাতের পর হযরত উসমান হারুনী র. লক্ষ্য করেন পুরো মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেছে মুসল্লিতে। তিনি সালাত আদায় শেষে জিজ্ঞেস করলেন কে এই খবর বাহিরে প্রচার করেছে। তখন হযরত খাজা মাইনুদ্দীন চিশতী র. বললেন আমি প্রচার করেছি। হযরত উসমান হারুনী র. বললেন তুমি কি জানো না এই খবর যে প্রচার করবে সে হবে জাহান্নামি? তখন হযরত খাজা মাইনুদ্দীন চিশতী র. বললেন উস্তাদ আপনার পিছনে সালাত আদায় করে আমার এত গুলো ভাই জান্নাতে যাবে আর এই খবর প্রচার করে আমি এক ব্যক্তি যদি জাহান্নামে যাই তাহলে আমার কোন আফসোস নাই। সুবহানাল্লাহ উম্মাতের জন্য কত ফিকির।

আমরা সকলেই একটু ভাবি, আমাদের রাসূল (সা:) মৃত্যুর সময় ও তার উম্মতের জন্য যে ফিকির করেছেন,তাঁর এই আদর্শ আমরা কতটুকু মেনে
আমরা উম্মাতের জন্য কতটা ফিকির করছি। আমার পাশেই আমার প্রতিবেশী সে গোমরাহির মাঝে আছে জেনেও আমি তার প্রতি উদাসীন। আল্লাহ তায়ালা আমাকে দয়া করে হেদায়েতের নূর স্পর্শ করিয়েছে। আমি তো জানি গাফেল হৃদয়ের পরিনতি। আমার প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম১৪০০ বছর আগে আমাকে না দেখা আমার প্রতি আমাদের প্রতি তার কত ফিকির ছিল,অথচ আমি তাকে নূন্যতম খেদমত করতে করিনি। কিন্তু আমার প্রতিবেশী সে তো কোননা কোন ভাবে আমার সামান্য কিছু উপকার হলেও করেছে তাহলে আমরা কেন তার প্রতি এত উদাসীন। এটা তো আমার রাসূলের আদর্শ না।প্রতিবেশির সাথে আমার সম্পর্ক তো চোখ এবং হাতের ন্যায় হওয়ার কথা ছিল। আমাদের চিন্তা ভাবনা হবে এমন যে আমি আমার পরিবার, আত্নীয়, এবং প্রতিবেশী দুনিয়ায় যেমন পাশাপাশি ছিলাম জান্নাতেও আমরা এভাবেই থাকব ইনশাআল্লাহ। আমরা সকলে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলার আহবান করবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ঐক্য ও সংহতি এবং উম্মাতের প্রতি ফিকির করার তৌফিক দান করুন আমিন।

অপেক্ষা করুন

0