উম্মতের ফিকির ২

উম্মতের প্রতি নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ফিকির
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহতায়ালার এবং অসংখ্য দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মোহাম্মদ (স.) এর ওপর ও তার পরিবার গণের ওপর।

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। উম্মতের প্রতি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ছিল অতুলনীয় ভালোবাসা। সর্বদা তিনি তার উম্মতদের জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে রক্ষা করার চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। উম্মতেরপ্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার কথা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসুল এসেছেন, যিনি তোমাদের বিপন্নতায় কষ্ট পান, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সুরা : তাওবা : ১২৮)

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, এ বিষয়ে, ‘তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকে এক মহামর্যাদাবান রাসুল, যিনি তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপথগামী হওয়ায় খুবই উদ্বিগ্ন এবং সৎকর্মের প্রতি ধাবমান হওয়ার বড়ই আশাবান। তিনি মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল দয়ালু।’ (সুরা : তাওবা : ২২৮)

নবী করিম (সা.) দোয়ার সময় সর্বদা উম্মতের কথা স্মরণ করতেন। সবার জন্য তার মন থাকত ব্যাকুল। তাই প্রতিদিন প্রত্যেক নামাজের পর উম্মতের গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন তিনি। তিনি তার উম্মতদের জন্য এতটাই চিন্তা করতেন যে তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে তার উম্মতদের মুক্তির জন্য কান্নাকাটি করতেন।

আমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। আর মুহাম্মদ (সা.) উম্মতের সব বিষয়ে খেয়াল রাখতেন। উম্মতের ক্ষতিকর বিষয়সমূহ হলো যে, তার বিপদ, ত্রুটিমুক্ত আমল, পার্থিব জীবনে সুখময়ভাবে জীবন পরিচালনা করা, পরকালীন সব ক্ষতিকর ও অনিষ্টকর বিষয় থেকে বাঁচানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন সারা জীবন।

রাসুল (সা.) উম্মতদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা করছেন। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে রাসুল (সা.) সব সময় ভাবতেন যে, কীভাবে মানুষদের অন্যায়-অবিচার কাজ থেকে বিরত রাখা যায়। নিজেকে বিলীন করে দিয়েছিলেন তার উম্মতের সার্বিক কল্যাণের জন্য।

রাসুল (সা.) গুনাহগার উম্মতের প্রতি বিশেষ স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের অনাগতদের প্রতি রাসুল (সা.)-এর ছিল তীব্র ভালোবাসা। কেননা তারা না দেখেই রাসুলের জন্য সাক্ষ্য দেবে। তাই তাদের দেখার বাসনা ছিল তার।
উম্মতের সবার পক্ষ থেকে রাসুল (সা.)-এর কোরবানি ছিল ভালোবাসার চূড়ান্ত নমুনা। তিনি পুরো মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে নিজেই কোরবানি করতেন। আবু রাফে (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) কোরবানির সময় দুটি মোটাতাজা ও শিংঅলা দুম্বা কিনতেন। নামাজ আদায় করে খুতবা দিতেন। অতঃপর তিনি নামাজের স্থানে দাঁড়ানো থাকতেই একটি দুম্বা নিয়ে আসা হতো। তা নিজ হাতে ছুরি দিয়ে জবাই করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ, এটা আমার পুরো উম্মতের পক্ষ থেকে, যারা আপনার তাওহিদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং আমার রিসালাত পৌঁছে দেওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৭৭৮২)

মুহাম্মদ (সা.) সব সময় উম্মতের জন্য পেরেশান ছিলেন। বদরের যুদ্ধে ৩১৩ জন সাহাবি যখন যুদ্ধ করতে গেলেন, তখন প্রিয়নবী মহান প্রভুর দরবারে তার সাহাবিদের জন্য দোয়া করলেন; হে আল্লাহ! এই সাহাবিরা আমার অনেক আদরের; এই সাহাবিদের তুমি মেরো না, এদের তুমি রক্ষা করো। উহুদে রাসুল (সা.)-এর দাঁত ভেঙেছে, মাথা ফেটেছে, খন্দকের যুদ্ধে মাটি বহন করতে করতে নিজ শরীরে দাগ হয়ে গিয়েছে; তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তায়েফের দুষ্ট ছেলেরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ঠাট্টা করেছে, গালমন্দ করেছে, তারা রাহমাতুলিল আলামিনের ওপর কঙ্কর নিক্ষেপ করেছে। তবু তিনি এসব হাসিমুখে সহ্য করেছেন উম্মাহের সার্বিক মুক্তির জন্য।

মুমিনদের প্রতি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় স্নেহশীল ও দয়ালু ছিলেন। মানবজাতি কোনো দুঃখ-কষ্টে লিপ্ত হবে এবং আজাব-গজবে পড়বে এটা সহ্য করতে পারতেন না। এ কথার প্রমাণ স্বয়ং কোরআন মজিদে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসুল, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে সহ্য করা দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। (সুরা : তাওবাহ : ১২৮)

কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর প্রিয় উম্মতদের জন্য সুপারিশ করার জন্য তিনি তাঁর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত একটি মাকবুল দোয়া জমা রেখে দিয়েছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সব নবীর এমন কিছু দোয়া আছে, যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়। সব নবী দ্রুত নিজেদের জন্য দোয়া করেছে। আমি তা কিয়ামতের দিন উম্মতের সুপারিশের জন্য গোপন করে রেখেছি। আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইনশা আল্লাহ আমার সুপারিশ লাভ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৯)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় উম্মতকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা-ফিকির করে শেষ করেছেন এমন নয়, বরং তিনি আখিরাতেও গুনাহগার উম্মতকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছেন।
এমন দরদি বন্ধু পেয়েও যদি আমরা তাঁর হক আদায় করতে না পারি, তাঁর সুন্নত পালন করতে না পারি, তাহলে আমাদের এই দুর্ভাগ্যের সীমা থাকবে না। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীজি (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।

অপেক্ষা করুন

0