উম্মতের ফিকির ১৯

“উম্মতের ফিকির কি?

এটি আমাদের প্রিয় নবী (সা:) থেকে পাওয়া এমন এক নিয়ামত যেটার কথা বলতে গেলেই হয়ত চোখ অশ্রুসিক্ত  হয়ে যায়। আমাদের মুসলিম ভাই বোনেরা যখন ইসলামের ছায়াতল থেকে বের হয়ে যায়,তখন তাঁদেরকে দ্বীনের রাস্তায় ফেরানোর জন্য অন্তরে তাদের জন্য দরদ রেখে দাওয়াতি কাজ করাই হলো উম্মতের ফিকির।

উম্মতের ফিকির কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা রাসূল (সা:) এর জীবনাদর্শ  থেকে জানা যায়:

একবার কাফেররা রাসূল (সা:) এর ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছিলো।আল্লাহর রাসূল (সা:) ময়লা, আবর্জনা, থুথু মাখা মুখ নিয়ে তিনি সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন,তাওহীদের কথা বলেছিলেন,এসমস্ত কিছু করার পরে বাড়ি ফিরলে তাঁর এই দৃশ্য দেখে জয়নাব (রা:) কেঁদে কেঁদে বললেন, “”হে আল্লাহর রাসূল আপনি কেন আপনার উম্মতের কষ্ট করছেন? “” তখন রাসূল (সা:) বললেন:””হে জয়নাব কেঁদো না, এমন এক সময় আসবে যখন তোমার বাবার এই দ্বীন, দুনিয়ার প্রত্যেকটা কাঁচা পাঁকা ঘরে পৌঁছে যাবে “”

সুবহান আল্লাহ……

আজকে মক্কা থেকে প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার  দূরে থেকেও আমরা মুসলিম। এটাই ছিলো রাসূল (সা:) এর উম্মতের জন্য ফিকির।
রাসূল সা: এর উম্মতের জন্য যে ফিকির এটা, মৃত্যুর সময় ও ছিলো এবং কিয়ামতের দ্বীনেও থাকবে, মৃত্যুর সময় ও তিনি একটি কথায় বলছিলেন: “”ইয়া উম্মাতি!!!ইয়া উম্মাতি!!! আমার উম্মত, আমার উম্মত!!! মৃত্যুর সময়ও নবীজী (সা:) আল্লাহর কাছে আশস্ত হতে চান!!!যে তার  উম্মতের জন্য আল্লাহ আছেন, থাকবেন সর্বদা!!
কিয়ামতের দিনেও চার ফেরেশতা  যখন গিয়ে রাসূল (সা:) কে গিয়ে হাশরের ময়দানের জন্য উঠতে বলবেন,””উঠুন ইয়া রাসূলুল্লাহ!!”” নবীজী (সা:) চোখ মেলে  উঠে কপালের বালি মুছতে মুছতে বলবেন,””আমাকে নিতে তোমরায় এলে শুধু? আমার উম্মত রা কেউ আসেনি? আমার অবর্তমানে আল্লাহ কি আমার উম্মতকে জাহান্নামে দিয়ে দিলেন?””
তখন ফেরেশতাগন বলবেন, “”এখনও!! ইয়া রসূলুল্লাহ!!!  এখন আপনি সেই উম্মতের চিন্তা করছেন!!!তাঁদের এখনো উঠাইনি, তাঁরা  এখনো কবরে, আপনাকে উঠিয়ে তাঁদেরকে উঠাবো”” তখন রাসূল সা:বলবেন, “”ওহ,তাহলে ঠিক আছে,চলো এবার!””

মানুষ নিজেকে যতটুকু মহব্বত করে মহানবী (স) তাঁর থেকে বেশি সেই উম্মতকে মহব্বত করেন। তাইতো জীবনের শেষ অবধি তিনি উম্মতদের কথা ভেবে গিয়েছেন।তাঁদের ইসলামের পথে ফেরানোর জন্য শতাধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন।এবং মৃত্যুর সময় অবধি উম্মতের কথা ভেবে গেছেন।হায়!! আমার নবী (সা:),আপনার এই ফিকির থেকে যদি আপনার উম্মতের একাংশ ও আমরা কিছু করতে পারতাম!!!!

রাসূল (সা:) এর উম্মতের প্রতি এই ফিকির থেকে কিছু জিনিস অনুভব করি ও বর্তমানে,আমি এগুলো করার চেষ্টা করছি আলহামদুলিল্লাহ :-

আমার দ্বীনের পথে ফেরা টা যতটা কষ্টকর ছিলো তার থেকেও বেশি কষ্টকর ছিলো, দ্বীনে ফেরার পর, যখন আমি দ্বীনের পথে আসি,পর্দায় নিজেকে আবৃত করি, আমি যেহেতু জেনারেলের স্টুডেন্ট  ছিলাম আমার কিছু বান্ধবী প্রায় আমাকে নানা ভাবে কটুক্তি করতো,আত্নীয় স্বজন, সহপাঠী এভাবে এক এক করে অনেকেই আমার সঙ্গ ছেড়েছে,কষ্ট দিয়েছে,প্রথমে ভাবতাম এমনটা কেন!! পরে বুঝলাম, হয়তো এটা আমার ভালোর জন্যই, আমাকে আল্লাহ তা’আলা  একা করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ!! অনেক টা সহ্য করেছি। এবং তাদেরকেও আমি দ্বীনের দাওয়াত  দিয়েছি। পর্দার দাওয়াত দিয়েছি, বিনিময়ে কষ্ট দিয়েছে অনেক, তারপেরও বলেছি,ভার্সিটির শেষ দিন দুজন সহপাঠী বান্ধবী  আমাকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছে। এরপর থেকে আমি প্রায় তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেই।এছাড়া ও আমি যেখানে বড় হয়েছি তার পাশে একটা অমুসলিম পরিবারের বসবাস ছিলো। ছোট থেকেই সেখান কার এক  মেয়ে আমার খুব কাছের বান্ধবী, বলা যায় বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি বাস্তবে  ও অমুসলিম হলেও আমার বাসায় ইফতার করা, আমার সকল ধর্মীয় অনুসাশনকে ওর সম্মান করা দেখে ভাবতাম ওকে আমি এতটা ভালোবাসি!! তাহলে অমুসলিম থেকে জাহান্নামী হবে এটা কিভাবে সহ্য করবো।অনেক ভাবতাম, ওর এখন একটি কট্টর অমুসলিম পরিবারে বিয়ে হয়েছে,যদিও আমার জন্য এটা অনেক কঠিন এখন তবুও আমি চেষ্টা করি,চিন্তা ভাবনা করি,আমি এখনও আমার চেষ্টা জারি রেখেছি,ইন্ডিয়াতেও আমার কিছু অমুসলিম বোনের সাথে পরিচয় আছে তাদের সাথেও এগুলো নিয়ে কথা হয়। চেষ্টা করে যাচ্ছি। আল্লাহ যেন রাসূল (সা:) এর জীবনাদর্শ বুকে জড়িয়ে চলার তৌফিক দান করেন ইং শা আল্লাহ। 

আমরা সকলেই একটু ভাবি, আমাদের রাসূল (সা:) মৃত্যুর সময় ও তার উম্মতের জন্য যে ফিকির করেছেন,তাঁর এই আদর্শ আমরা কতটুকু  মেনে চলি!
আমরা একবার ভাবি!!!

অপেক্ষা করুন

0