উম্মতের ফিকির ১৪

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দরবারে মস্তক অবনত চিত্তে শুকরিয়া আদায় করছি যে, তিনি আমার মত ক্ষুদ্র নগণ্য গুনাহ গার বান্দাকে উম্মাতের ফিকির নিয়ে কিছু কথা লেখার তাওফিক দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ ❤️ ।শুরুতে আমি যা বলতে চাই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র বিশ্ববাসীর কল্যাণ সরূপ। এজন্যই তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উম্মতের কল্যাণ কামনায় কাটিয়ে দিয়েছেন। উম্মতের সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং সর্বাধিক ক্ষতির বিষয় হচ্ছে, দুনিয়াতে ঈমানহারা হওয়া এবং এরই পরিণতিতে আখিরাতে চিরস্থায়ী জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া । এই ক্ষতি থেকে উম্মতকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য তিনি এত বেশী মেহনত করতেন যে, তিনি নিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিলীন করে দেয়ার নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিলেন এবং সর্বাবস্হায় সর্বস্হানে শুধু এ চিন্তায় নিমগ্ন থাকতেন যে, সকল মানুষ কিভাবে ঈমানদার হয়ে যায় আর এ উদ্দেশ্যে তাঁদের মাঝে ব্যাপকভাবে দা‘ওয়াত দিতে থাকতেন ।
তিনি দীনী দা‘ওয়াতের সকল প্রকার পন্থাই অবলম্বন করেছিলেন কখনো পৃথকভাবে দা’ওয়াত দিয়েছেন। আবার কখনো সম্মিলিত মজলিসে দা‘ওয়াত পেশ করেছেন । রাসূল স. কোন কোন কাফিরকে সত্তর বারের বেশী ইসলামের দা‘ওয়াত দিয়েছেন । আর এ ব্যাপারে তিনি এত বেশী পেরেশান ও অস্হির থাকতেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আয়াত অবতীর্ণ করে তাঁকে সান্ত্বনা প্রদান করেছেন। অর্থাৎ“তারা যদি ঈমান না আনে, তাহলে তাদের চিন্তায় কি আপনি নিজেকে ধ্বংস করে দিবেন ? ” [ সূরাহ কাহ্‌ফ ৬] মুমিনগণের প্রতিও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় স্নেহশীল ও দয়ালূ ছিলেন। মানব জাতি কোন দুঃখ-কষ্টে লিপ্ত হবে এবং আযাব-গযবে পড়বে-এটা সহ্য করতে পারতেন না। একথার প্রমাণ স্বয়ং কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে সহ্য করা দুঃসহ্। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল,দয়াময়। (সূরাহঃ তাওবাহ-১২৮)

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুনাহগার উম্মতের প্রতি যে এত মুহব্বত রাখেন, তার প্রমাণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিঢি কাজ কর্ম থেকে প্রকাশ পেয়েছে। আর তিনি দুনিয়াতে উম্মতকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা ফিকির করে শেষ করেছেন এমন নয়, বরং তিনি আখিরাতেও গুনাহগার উম্মাতকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবেন। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক নবীকেই কবুলের বিশেষ নিশ্চয়তা দিয়ে একটি দু‘আ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সকল নবীগণ (আঃ) দুনিয়াতেই সেই দু‘আটি চেয়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমি সেই অধিকার দুনিয়াতে প্রয়োগ করিনি, আখিরাতে আমি আমার গুনাহগার উম্মতের নাজাতের জন্য তা সংরক্ষণ করে রেখেছি ।
এসব ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে- তিনি সর্বাবস্থায় এ ফিকিরে নিমগ্ন থাকতেন যে , কিভাবে সকল মানুষ ঈমানদার হয়ে যায় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতী হয় ।সেখানে আমরা কি করছি। অথচ শ্রেষ্ঠ রাসূলের শ্রেষ্ঠ উম্মাত আমরা। রাসূল স. এখন দুনিয়া নেই। এখন এই উম্মাহ কে নিয়ে চিন্তা ফিকির করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। কিভাবে দুনিয়ার ফিতনা এবং পরকালের ফিতনা থেকে নিজেকে এবং উম্মাহ কে বাঁচানো যায়।

শিক্ষনীয়ঃ
সারা দুনিয়ার সকলেই কিভাবে দীনের জ্ঞান পেয়ে যায়, সে চিন্তায় যারা দীন সম্পর্কে কিছু বুঝেছে, তাদের সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকা জরুরী। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সীনা মুবারক হতে উত্তপ্ত ডেগের ফুটন্ত পানির আওয়াজের মতই করুণ আওয়ায উম্মতের প্রতি সমবেদনায় নির্ঝরিত হত ।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন সারা বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ, তেমনিভাবে উম্মতে মুহাম্মদী বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণকর । সুতরাং বিশ্ববাসীর নিকট দীন ইসলামের দা‘ওয়াত পৌছে দেয়া এ উম্মতের উপর ফরজে কিফায়া । অর্থাৎ সামান্য সংখ্যক লোক দায়িত্ব আঞ্জাম দিলে, সকলে দায়িত্ব মুক্ত হতে পারবে না। বরং নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক মানুষের ময়দানে কাজ করতে হবে, যাতে করে বিশ্বের সকলের নিকট দা‘ওয়াত পৌঁছানো সম্ভব হয়। এটাই ফরযে কিফায়ার অর্থ। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য যে প্রথমতঃ আমরা ঈমান আমল সহীহ করার ফিকির ও প্রচেষ্টা চালাব তারপর নিজের পিতা-মাতা,ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীদের ঈমান ও ‘আমল সহীহ করার জন্য শক্তি ও সামর্থ অনুযায়ী দা‘ওয়াত দিব এবং প্রচেষ্টা চালাব ।
এরই পাশাপাশি অমুসলিম ভাইদেরকে শক্তি ও সামর্থ অনুযায়ী ইসলাম গ্রহণের দা‘ওয়াত দিব। তাদের নিকট ইসলামের পরিচিতি তুলে ধরব এবং সহজ সরলভাবে তুলে ধরব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলে গেছেন “ আমি সহজ সরল দীন নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। নিশ্চয়ই দীন অতি সহজ। তোমরা লোকদের নিকট দীনকে সহজ ভাবে পেশ করো। কঠিন ও দুঃসাধ্য করে নয় ।”(ইবনে মাজাহ-৪৩) আর একমাত্র ইসলাম ধর্মই মানুষকে চিরস্হায়ী জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারে-একথা বুঝাব। এ কাজের জন্য নিজের এলাকা, দেশ ও সারা বিশ্বের অমুসলিমদেরকে আমাদের কাজের কর্মক্ষেত্র মনে করব এবং নিজের শক্তি-সামর্থ অনুযায়ী বিভিন্ন হিকমতের মাধ্যমে তাদের কাছে দা‘ওয়াত পৌঁছাব। আমাদের দ্বারা যদি একজন অমুসলিমও ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে সমগ্র দুনিয়া থেকে বড় দৌলত হাসিল হয়ে যাবে এবং এটাই আমাদের নাজাতের সবচেয়ে বড় উসীলা হতে পারে।ইনশাআল্লাহ ❤️”

অপেক্ষা করুন

0