উম্মতের ফিকির ১৩

এক অত্যাচারী কাফের রাজার ছিল এক বিশেষ জাদুকর।রাজা তার কাজকর্মে সেই জাদুকরের সাহায্য গ্রহণ করত।সেই যাদুকর যখন বৃদ্ধ হয়ে গেল,তখন রাজাকে বলল, আমার কাছে কোন এক বালককে পাঠিয়ে দিন। আমি তাকে জাদুবিদ্যা শিখিয়ে দিয়ে যাব।যাতে আমার মৃত্যুর পর সে আপনার কাজে আসে।রাজা একটি বালক নির্বাচন করল।বালকটি নিয়মিত জাদুকরের কাছে আসা-যাওয়া শুরু করলো। তার যাতায়াত পথে একজন তাওহীদে বিশ্বাসী আবেদের ইবাদাতখানা ছিল।বালকটি সেই আবেদের কাছে বসত এবং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতো।সে সব কথা বালকটিকে বড় আকর্ষণ করতো।এক পর্যায়ে বালকটি তাওহিদে বিশ্বাসী হয়ে গেল।এই খবর ঘটনাক্রমে রাজার কানে পৌঁছল,রাজা ভীষণ ক্ষিপ্ত হল। তার নির্দেশে সেই আবেদ ও বালককে বন্দি করা হলো।রাজা তাদেরকে তাওহীদ ও ইমান পরিত্যাগ করার জন্য চাপ দিল। কিন্তু তারা তাতে রাজি হলো না।ফলে রাজার নির্দেশে আবেদকে হত্যা করা হলো।এরপর রাজা নির্দেশ দিল বালককে হত্যা করার। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো তারা তাকে হত্যা করতে পারছিল না।তাকে পাহাড় থেকে ফেলে , পানিতে ডুবিয়ে নানাভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রাজার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রতিবারই ব্যার্থ হয়েছে। এরপর বালক নিজেই রাজাকে এক অদ্ভুত প্রস্তাব দিল।বালক বলল আমি জানি আমাকে কীভাবে মারলে তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে।যদি তুমি তীর নিয়ে সেটা “এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে..”বলে আমার দিকে ছুড়ো।তবে সেই তীরের আঘাতে আমার মৃত্যু হবে।তবে শর্ত হলো তা করতে হবে জনসাধারণকে একটি উন্মুক্ত মাঠে জড়ো করে তাদের সামনে।বালক জানতো এতে সে মারা যাবে, কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল তার জাতির সামনে সত্যকে তুলে ধরা।গোটা কওমকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো।লোক জড়ো হলো। রাজা বিসমিল্লাহ বলে তীর ছুঁড়ল।বালক শহীদ হয়ে গেল।এ দৃশ্য উপস্থিত দর্শকদের অন্তরে প্রবল ঝাঁকুনি দিল। তাহলে বালক যে আল্লাহর ইবাদাত করতো তিনিই আসল রব!তারা সকলেই আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনল।এতে রাজা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বিশাল অগ্নিকুণ্ড জ্বালালো। এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ঝাঁপ দিতে বলল। মুমিনগণ তাতে একটুও পিছপা হলো না। সেদিন ঈমানের বিনিময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে শাহাদাত বরণ করেছিলেন।এই এতো গুলো মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর পিছনে সেই বালকের ফিকির ছিল।সেই কমবয়সী বালক নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে পুরো কওমকে জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দিয়ে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার ফিকির করেছিল।কতক মুফাসসিরিনে কেরামের মতে, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে সুরা বুরূজে আসহাবুল উখদুদের যে ঘটনা উল্লেখ করেছেন তা এই বালকের গল্প। আল্লাহ তায়ালা এই ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন–“যালিকাল ফাউযুল কাবির”–এটাই মহাসাফল্য।

অপেক্ষা করুন

0