উম্মতের ফিকির-১২

সেহরিশ তখন ইন্টারে পড়ে। নতুন নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে। প্রথম দিন কলেজে যেয়েই জিহা নামের এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। মেয়েটা খুবই শান্ত প্রকৃতির। তাদের কথোপকথনের এক পর্যায়ে জিহা সেহরিশকে জিজ্ঞাসা করে যে সে আগে মাদ্রাসার স্টুডেন্ট ছিল কিনা। সেহরিশ প্রশ্নটির জন্য প্রস্তুত না থাকলেও প্রশ্নটি করার কারণ তার অজানা নয়। তার বেশভূষা দেখে অনেকেই ধারণা করে বসে যে সে মাদ্রাসা লাইনের স্টুডেন্ট। সেহরিশ জিহাকে জানাই যে; না, সে মাদ্রাসার স্টুডেন্ট ছিলনা। সেখানকার বাকিদের মতোই সেও জেনারেল লাইনের স্টুডেন্ট। সে যখন নাইনে পড়তো তখন সে জানতে পারে ইসলামে নামাজ-রোযার মতো পর্দা করাও ফরজ। তখন থেকে সে পর্দা করা শুরু করে আলহামদুলিল্লাহ। জিহা তাকে জানায় যে, পর্দা করা যে তাদের উপর ফরজ করা হয়েছে তা তো সে জানতোইনা। সেহরিশ ইমার্জেন্সির জন্য সবসময় তার ব্যাগে এক্সট্রা একটা হিজাব রাখে। সে জিহাকে জানায় জিহা যদি চায় তাহলে সে তাকে হিজাবটা পড়িয়ে দিতে পারে। জিহার অনুমতি নিয়ে সেহরিশ তাকে হিজাব পড়িয়ে দেয়। জীবন এই প্রথম জিহার হিজাব পড়া। মেয়েটা প্রথমে একটু আনইজি ফিল করলেও একটু পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কলেজের প্রথম দিনের সাথে শুরু হয় তার নতুন এক জীবনের দিকে পথ চলা।

এর কিছুদিন পরে তারা দুজন সোশাল মিডিয়াতে একে অপরের সাথে যুক্ত হয়। সেহরিশ দেখতে পায় জিহার ফেসবুকে তার অনেক বেপর্দা ছবি দেয়া। এর মাধ্যমে যে পর্দার খেলাফ হচ্ছে সেটা সে জিহাকে জানালে জিহা বলে তার আইডি তো লক করা, বাইরের কেউ তো তাকে দেখতে পারেনা। সেহরিশ তাকে জিজ্ঞাসা করে কোনো পুরুষ তার ফ্রেন্ড লিস্টে আছে কিনা। উত্তরে জানতে পারে তার খালাতো-মামাতো ভাইয়েরাও তার সাথে ফেসবুকে যুক্ত আছে। সেহরিশ জিহাকে বোঝায় তার চাচাতো-মামাতো ভাইয়েরাও তার জন্য গাইরে মাহরাম। কে কে তার জন্য গাইরে মাহরাম ও কার কার সামনে তাকে পর্দা করতে হবে সেসব তাকে জানায়। আলহামদুলিল্লাহ! দুই মিনিট পরে জিহার আইডিটতে ঢুকে সেহরিশ তো পুরাই অবাক। সে দেখতে পায় জিহার আইডির সম্পুর্ণ রূপ-রেখাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আইডিতে আর একটিও বেপর্দা ছবি অবশিষ্ট নেই। এভাবেই ধীরে ধীরে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সেহরিশের মেহনতের মাধ্যমে জিহাকে হিদায়াতের সুশীতল ছায়ায় নিয়ে আসে।

আমাদের আশেপাশে আমাদেরই কত-শত ভাই-বোনেরা নিমজ্জিত হয়ে আছেন অজ্ঞতায়। তাদের হয়তো কখনও এটুকুও জানা হয়ে উঠেনি যে তাদের রব তাদের জন্য কি ফরজ করেছেন। তাদের নিয়ে আমাদের সামান্য চিন্তা-ফিকির তাদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জারিয়ে হতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

অপেক্ষা করুন

0