উম্মতের ফিকির-১১

উম্মতের ফিকিরঃ-

একদা শায়খ উসামা বিন লাদেন (রহি.)-এর এক সহচর ল্যাপটপে তাঁকে একটি ভিডিও দেখান। ভিডিওটি ছিল ধ্বংসস্তূপে পরিণত ফিলিস্তিনের একটি দৃশ্য। একটি ছোট্ট শিশু ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে শায়খের ছবি তুলে ধরেছিল। করুণ চাহনি নিয়ে সে ছবির দিকে ইঙ্গিত করে উচ্চস্বরে বলছিল, ❝উসামা, তোমার প্রতিশ্রুতি কখন পূরণ করবে? নিজের প্রতিশ্রুতি কখন পূরণ করবে তুমি?❞
এই দৃশ্য দেখে শায়খ নিজেকে সংবরণ করতে পারলেন না। ফুঁপিয়ে কান্না করছিলেন আর বলছিলেন, ❝পৃথিবীর আপন-পর সবাই যার শত্রু, বিশ্ববাসী যাকে হরহামেশা হত্যার পরিকল্পনা করছে, তার কাছে তুমি কী চাও?❞ কান্নায় তাঁর কণ্ঠ বুজে আসছিল। কাঁদতে কাঁদতে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে তাঁকে তাঁর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।হুঁশ ফিরে এলেও সেই শিশুর আর্তনাদ যেন তাঁর অন্তরে কষাঘাত করছিল। তিনি আবারও কাঁদতে থাকেন। প্রায় তিন দিন পর তাঁর অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
সুবহানাল্লাহিল আযিম! ইনি হচ্ছেন সেই মহাবীর, যিনি আরবের এক ধনকুবের পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন।অথচ উম্মাহর আত্মমর্যাদা ও সম্মান রক্ষায় তিনি আলিশান অট্টালিকা ছেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন আফগানিস্তানের দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে।
এটাই তো উম্মতের ফিকির!একটি মুসলিম জাতি যখন অবহেলিত হয়, তখন প্রকৃত উম্মাহর সেনানী শান্তিতে থাকতে পারেন না। ইতিহাস সাক্ষী, যে জাতি উম্মতের চিন্তা করেছে, আল্লাহ তাদের হৃদয়ে বিশেষ শক্তি ও আত্মত্যাগের চেতনা দান করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই উম্মাহ ছিল এক দেহের মতো, যেখানে এক অঙ্গ ব্যথা পেলে সমগ্র দেহ কষ্ট অনুভব করে।
শায়খ উসামা (রহি.) সেই ঐতিহ্যের ধারক ছিলেন। তাঁর কান্না ছিল উম্মাহর কান্না, তাঁর সংগ্রাম ছিল উম্মাহর মুক্তির সংগ্রাম। তিনি জানতেন, দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু উম্মাহর জন্য আত্মত্যাগ চিরস্থায়ী মর্যাদা এনে দেয়। এই ফিকিরই তাঁর রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল, তাঁকে বাধ্য করেছিল সাম্রাজ্য বিসর্জন দিয়ে উম্মাহর জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে।

অপেক্ষা করুন

0