উম্মতের ফিকিরের ঘটনা বলতে গেলে আমি এমন একজন আলিমের কথা শেয়ার করবো যাকে দেখে সর্ব প্রথম অন্তরে দ্বীনের নূরের আলোকচ্ছটা বের হয়েছে রব্বে কারীমের ইচ্ছায়। সময়টা ২০১১ সাল, সদ্য এসএসসি পাশ করে ‘গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ‘ এ ভর্তি হয়েছি। কলেজের পাশেই গোপালগঞ্জের বিখ্যাত দ্বীনিয়া মাদ্রাসা, চন্দ্রদিঘলিয়ায়। মাদ্রাসার মুহতামিম, মুহতারাম আব্দুল্লাহ সাহেব দা. বা., যাকে প্রথম দেখি কোন এক জুমুআয় খুব সম্ভবত অথবা ঐ মাদ্রাসারই মাহফিলে। প্রথম যখন তার নূরানী চেহারাটা দেখি তখনই অন্তরে এক অন্যররম শীতলতা অনুভব করি। আর যখন তার বয়ান প্রথম শুনি তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুধু শুনতেই থাকি। এরপর যখন তাকে আরো জানতে শুরু করি তখন আরো বিমোহিত হই, মানুষ এতোটা বিনয়ী, আল্লাহ্ভীরু আর দুনিয়া বিমুখও হতে পারে তাকে না দেখলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না। গ্রামটা একটা গ্রাম নিয়েই একটা ইউনিয়ন, সেই সুবাদে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বিভক্ত। যার দরুন প্রতিটি পাড়া মহল্লায় রয়েছে মসজিদ। তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার এক মহল্লার মসজিদে উপস্থিত হতেন, মুসল্লিদের খোজ খবর নিতে, মসজিদের খোজ খবর নিতে, ইমাম মুয়াজ্জিনদের খোজ খবর নিতে, এলাকাবাসীর কোন অভিযোগ অনুযোগ আবদার আছে কিনা সেটা জানতে। আমরা যখন খবর পেতাম যে তিনি অমুক মসজিদে এসেছেন, শুনেই দৌড়ে ছুটে যেতাম এক অদৃশ্য ভালোবাসার টানে। সপ্তাহের প্রতিটা দিন চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় থাকতাম কবে শুক্রবার আসবে আর তার সুমিষ্ট দরদমাখা কন্ঠে জুম’আর বয়ান শুনবো। তার মাদ্রাসায় বাৎষরিক মাহফিল হতো ৩ দিন যাবৎ, আমরা তাবলীগের মতো জামাতবদ্ধ হয়ে চলে যেতাম মাদ্রাসায়। সেখান থেকেই শুরু হয় তাবলীগের প্রতি মহব্বত ভালোবাসা। তিনি যখন শুনতেন যে কলেজের ছাত্ররা এসেছে, তিনি কি পরিমাণ খুশি যে হতেন বলার মতো না। এক কথায় বুকে টেনে আগলে রাখতেন। আমরা একবার হুজুরের কাছে বায়না করলাম হুজুর আমরা কুরআন শিখতে চাই, তিনি যে কি পরিমান খুশি হলেন বলার ভাষা নেই। শুধুমাত্র আমাদের জন্য হাটহাজারী থেকে একজন উস্তাদ নিয়ে এলেন, এমনকি আমাদের থেকে কোন হাদিয়া নিলেন না, পুরোটা তিনি বহন করলেন, আমাদের জন্য কায়দাগুলো পর্যন্ত তিনি নিজের পকেট থেকে কিনলেন। এমনভাবে ফিকির করতেন তিনি দ্বীনভোলা মানুষদের নিয়ে। তার সম্পর্কে বলতে গেলে একটা রাত পার করে দেয়া যাবে। সেই ২০১৫ তে যে কলেজ জীবন শেষ হলো, আর তার সাথেও মোলাকাত হলোনা কখনো। দুয়া করি তিনি তার ঈলমের নূর দ্বারা আমাদের মতো পথভোলা মানুষদের পথ দেখিয়ে যান আমৃত্যু, আল্লাহ্ তার নেক হায়াতকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করুন, আমীন।