উম্মতের ফিকির ০৭

“বাইয়াতে রিদওয়ানঃ ছয় বছর জন্মভ‚মি থেকে বহু দূরে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁর অন্তরে মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠল এবং বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করার ইচ্ছাও জাগ্রত হলো। তাই তিনি সেই শাওয়াল মাসের পরের মাসে জিলকদে তিন হাজার চার শ’ সাহাবার এক কাফেলা নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। যুলহুলায়ফা নামক স্থানে এসে উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধলেন, সাহাবায়ে কেরামও ইহ্রাম বাঁধলেন।
ওদিকে মক্কার কাফির-মুশরিকদের কাছে খবর পৌঁছল যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দিকে আসছেন। তাঁর সঙ্গে কয়েক হাজার সহচর রয়েছে। তারা এই কাফেলার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি অশ্বারোহী বাহিনী মোতায়েন করল।
মক্কার কাফির-মুশরিকদের পক্ষ থেকে বুদায়ল ইবনে ওয়ারাকা খুযায়ী প্রিয় নবী সা.-এর সামনে এসে মুসলিমদের আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে প্রিয় নবী সা. ইহরাম পরিহিত সাহাবীগণকে এবং কোরবানির জন্য সঙ্গে আনা উটগুলো দেখিয়ে বলেন : এগুলো দেখে কি তোমরা বুঝতে পারছ না আমরা কেন এসেছি? বুদায়ল নগরীতে ফিরে গিয়ে সব জানালে কুরাইশ কাফির-মুশরিক নেতারা অনুধাবন করল- এই কাফেলার আগমনের উদ্দেশ্য কেবল বায়তুল্লাহ শরিফ জিয়ারত করা। তবুও তাদের কেউ কেউ মুসলিমগণকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিতে রাজি হলো না। তারা একদল তরুণকে কাফেলাটি আক্রমণ করতে পাঠাল। তাদের আটকানো হলো। কিন্তু প্রিয় নবী সা. তাদের ছেড়ে দিতে বললেন। একপর্যায়ে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার জন্য হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে নগরীতে পাঠানো হলো। তিনি মক্কা নগরীতে গিয়ে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, আমরা কেবল বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে এসেছি। কিন্তু তাঁর কথায় কেউ কর্ণপাত না করে সাময়িকভাবে তাঁকে আটকিয়ে রাখল।
হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু ফিরছেন না দেখে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনও গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, কুরাইশ মুশরিকরা হযরত উসমানকে (রাদি.) হত্যা করেছে! এমন অবস্থায় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাছের নিচে কাফেলার সকল সাহাবায়ে কেরামকে সমবেত করে প্রত্যেকের কাছ থেকে জান কোরবান করার অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। ওই অঙ্গীকার বায়াতুর রিদওয়ান নামে অভিহিত হয়েছে। কুরআন মজিদে ওই অঙ্গীকার সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে :
(হে রাসূল), আল্লাহ তো মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বায়াত গ্রহণ করল, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন, তাদের তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়। (সুরা ফাতহ : আয়াত ১৮)।
বৃক্ষতলে সেই বায়াতুর রিদওয়ান সম্পন্ন হওয়ার পরপরই হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হুদায়বিয়ায় ফিরে এসে ওই বায়াত গ্রহণ করলেন।

আমরা এই ঘটনা থেকে বুঝতে পারি, রাসুল সাঃ ও তার সাহাবিরা উম্মার প্রতি কেমন তাদের কেমন দরদ ছিল। উম্মত কে নিয়ে তারা কেমন ফিকির করতেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের শবাইকে উম্মত কে নিয়ে ফিকির এবং রাসুল সাঃ ও তার সাহাবিদের মত করে দিন ইসলাম বুঝে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন। “

অপেক্ষা করুন

0