“সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত নবী ও রাসূল আল্লাহ তা‘আলা প্রেরণ করেছেন, প্রত্যেকেই তাঁদের উম্মতের জন্য গভীর ফিকির করেছেন। আমাদের শেষ নবী মুহাম্মদ সাঃ উম্মতের কল্যাণে এতই ব্যাকুল হতেন যে বহু রাত নির্ঘুম কাটাতেন, দীর্ঘ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তাঁর পা ফুলে যেত।
হযরত আয়েশা রাঃ বর্ণনা করেন—এক রাতে নবীজি সাঃ নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদায় গেলেন যে আমার মনে হলো, তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি তাঁর পা নাড়ালাম, তখন তিনি নড়লেন।
নবীজি সাঃ মেরাজের মহান সফরেও উম্মতের কথা ভুলে যাননি। আবার একবার মদিনায় এক ইহুদি বালক মৃত্যুশয্যায় কাতরাচ্ছিল। নবীজি সাঃ তাঁর ঘরে গিয়ে বললেন, “তুমি ইসলাম গ্রহণ করো।” ছেলেটি তার বাবার দিকে তাকাল, আর তার বাবা বললেন, “মুহাম্মদ সাঃ এর কথা মেনে নাও।” তখন ছেলেটি ইসলাম কবুল করল এবং কিছুক্ষণ পর মৃত্যুবরণ করল। নবীজি সাঃ তখন বললেন—“এই ছেলেটির নাম কিছুক্ষণ আগেও জাহান্নামের খাতায় ছিল, আর এখন তা জান্নাতের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।”
এ ফিকির ছিল কেবল উম্মতের জন্যই। বিদায় হজের সময় সোয়া লক্ষাধিক সাহাবী রাঃ সমবেত হয়েছিলেন। আরাফাতের ময়দানে, জাবালে রহমতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নবীজি সাঃ যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন, তাতে বললেন:
“আমার নিকট থেকে একটি আয়াত হলেও তোমরা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিও।”
এই আহবানে সাড়া দিয়ে সাহাবীগণ রাঃ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লেন। অথচ মক্কা-মদিনায় আজ মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার সাহাবীর রাঃ কবর রয়েছে। তারা কি জানতেন না যে, মক্কা-মদিনায় থাকলে নবীজি সাঃ এর কাছাকাছি থাকা যাবে, অথবা আরো সাহাবীদের সান্নিধ্যে থাকা যাবে? তবুও কেন তাঁরা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লেন?—শুধুমাত্র উম্মতের কল্যাণের জন্য। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তাঁরা নবীজি সাঃ এর দেখানো পথ অনুসরণ করেছিলেন।
তাঁদের এই ত্যাগ আর ফিকিরের কারণেই আজ আমরা দূর প্রান্তে থেকেও মুসলিম হতে পেরেছি। যেমন চীনের গুয়াংঝু শহরে আজও হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাঃ এর মাজার বিদ্যমান, যা মদিনা থেকে প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দূরে।
তেমনি হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী রহঃ উম্মতের জন্য অতুলনীয় ফিকির করেছিলেন। তাই তো তাঁর হাতে প্রায় ৯০ লক্ষ অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
একবার তাঁর ওস্তাদ ও শায়খ ওসমান হারূনী রহঃ বললেন:
“যে ব্যক্তি আগামীকাল সকাল ফজরের নামাজে আমার পেছনে দাঁড়াবে সে জান্নাতি হবে। তবে সাবধান! এই কথা যদি কারো কাছে পৌঁছে যায় তবে সে হবে জাহান্নামী।”
পরদিন ফজরের নামাজে পুরো মসজিদ উপচে পড়ল। তখন শায়খ হারূনী রহঃ জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি জানতে না এই কথা যে কাউকে জানাবে সে জাহান্নামে যাবে?
খাজা মইনুদ্দিন চিশতী রহঃ উত্তর দিলেন:
“হ্যাঁ, আমি জানতাম। আমি একা জাহান্নামে গেলে যদি আমার নবীর সাঃ লক্ষ উম্মত আমার উছিলায় জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।” তবে আমি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি রহঃ জাহান্নামে হাসিঁ মুখে যেতে রাজি।
এই ছিল আমাদের পূর্বসূরী নবী-রাসূলগণ, সাহাবীগণ রাঃ এবং ওলামায়ে কেরামের উম্মতের প্রতি ফিকির ও ত্যাগের বাস্তব চিত্র।”