আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেছেন, ❝ মুমিনগণ তোমরা পরস্পর ভাই ভাই ❞। আমরা সবাই নবী সাঃ এর উম্মত। এক ই দেহ ও পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। অথচ বর্তমানে মুসলিম হয়েও একে অপরের দোষ অন্বেষণ করা, গীবদ – হাসাদে লিপ্ত হওয়া, মিথ্যা অপবাদ, কু ধারণা করে বিদ্রুপ করা এসব ই যেন হয়ে গেছে আমাদের একমাত্র ফিতরাত। দাওয়াতের ক্ষেত্রে দ্বীনের কিছু বিষয় নিয়ে বিরোধ ও মতভেদ কখনো খারাপ নয় তবে আমারা সেই বিরোধের জের ধরে ব্যক্তিগত আক্রমণ তথা এমন আরো কিছু কাজ করি যেন ভুলেই যাই প্রতিপক্ষ আমাদের ই মুসলিম দাঈ ভাই। দাঈ ভাই হিসেবেও যে কিনা ৩ টি হকের দাবীদার সেই ভাইয়ের হক আদায় ও দূরের কথা যেন আমরা আক্রোশে তাকে ছিড়ে ফেলতে চাই। একজন মুমিনের জন্য এটা কত বড় লজ্জা ও দুর্ভাগ্যের বিষয়?
নিজের কথা বা কাজের মাধ্যমে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো মুসলিমকে কষ্ট না দেওয়া,কোনো মুসলিমকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য না করা,মুসলমানদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠার এবং এর জন্য সহায়ক সকল পন্থা অবলম্বন করা এসব ই হাদীসে এসেছে।
ঐক্যের ব্যাপারে দাঊদ আঃ ও সুলাইমান আঃ এর একটি ঘটনা উল্যেখ করছি।
❝ এক ব্যক্তির ছাগল অন্য ব্যক্তির ক্ষেতে রাত্রে ঢুকে ফসল নষ্ট করে দেয়। দাঊদ (আঃ) যিনি নবী হওয়ার সাথে সাথে একজন বাদশাহও ছিলেন, তিনি ফায়সালা করলেন যে, ক্ষেতের মালিক ছাগলগুলি নিয়ে নিক। যাতে তার ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। সুলাইমান (আঃ) এই ফায়সালায় একমত হলেন না। বরং তিনি ফয়সালা করলেন যে, ছাগলগুলি ক্ষেতের মালিককে কিছু দিনের জন্য দেওয়া হোক, সে সেগুলি দ্বারা উপকৃত হবে এবং ক্ষেত ছাগলের মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হোক, সে ক্ষেতের সেচ-যত্ন ও দেখাশুনা করে ঠিক করুক। যখন ক্ষেত পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে, তখন ক্ষেত ক্ষেতের মালিককে ও ছাগলগুলি ছাগলের মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। প্রথম ফায়সালার তুলনায় দ্বিতীয় ফায়সালা এই জন্যই ভালো যে, এতে কাউকেই নিজের মাল হতে বঞ্চিত হতে হচ্ছে না। কিন্তু প্রথম ফায়সালায় ছাগলের মালিককে ছাগল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এ সত্ত্বেও আল্লাহ দাঊদ আঃ এরও প্রশংসা করেছেন ও বলেছেন যে, আমি দাঊদ ও সুলাইমান উভয়কেই জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছি।
এখানে ইজতিহাদের পার্থক্য হয়েছে, কিন্তু বিভেদ হয়নি।এই পার্থক্যের আগেও যেমন পিতা পুত্র দুই নবী এক ছিলেন, তেমনি এক ছিলেন মতপার্থক্যের পরও।
এমন ই হওয়া উচিত মুসলিম উম্মতের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব।