ভাইয়ের বন্ধন ভাঙলো কেন?
ছোট বেলা থেকেই মায়ের মুখে শুনে আসছি এক সতর্ক বার্তা- “সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।” বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মা আমাদেরকে খুবই সচেতনতার সাথে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে বলতেন যেন পথচ্যূত না হয়ে যাই।
আমরা দুই ভাই । আমার নাম ইনকিলাব আর আমার ভাইয়ের নাম ইখতিলাফ। ছোট বেলায় আমার এক বন্ধু ছিলো, সে অবশ্য এখনো আমার বন্ধু। ওর নাম ইফতিরাক।
ছোট বেলা থেকেই আমার ভাই আমাকে একটু নিজের শাসনে রাখার চেষ্টা করতো। টিফিনের টাকা, চকলেট, আইসক্রীম, কলম-খাতা নিয়েও করতো নানা ধরনের বৈষম্য। তবুও ভাইকে ভীষন ভালোবাসতাম কারন মা শিখিয়েছিলেন,” আল্লাহ বলেছেন, আর তোমরা সবাই আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”(সূরা-৩:১০৩) মা আরো বলতেন- ” পরস্পর কলহ-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ। তাই তোমরা তাওহিদের ভিত্তিতে দুই ভাই ঐক্যবদ্ধ থেকো ।”
কিন্তু আমার প্রাণের বন্ধু ইফতিরাক আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়ের দোষগুলো ধরিয়ে দিতো। তখন আমি ভাবতাম আমি কি বোকা!” এমন ভাইকে ভালোবাসি আমি? অন্য দিকে ইফতিরাককে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পেয়ে মনে মনে খুশিও হলাম কিছুটা।
তখন অল্প বয়স, রক্ত গরম তাই বন্ধুর কথায় ভরসা করে মায়ের উপদেশ ভুলে গিয়ে ভাইয়ের সাথে কলহ বাঁধিয়ে বসলাম । শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের শাসন থেকে নিজেকে মুক্তও করলাম। আজ আমি স্বাধীন, আমি মুক্ত। আহ! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
কিছু দিন না যেতেই আমার সেই বন্ধু দেখি আমার পুরো চকলেট, টিফিনই খেয়ে ফেলে, আমার খাতায় লিখে নিজের নাম। ভাবলাম বন্ধু তো আমাকে ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছে তাই এইটুকু তার প্রাপ্য।
ওমা! যত বড় হচ্ছি ততোই দেখি আমার বন্ধু আমার সব কিছু নিয়ে যাচ্ছে। এখন অবশ্য চকলেট, বিস্কুট নেয় না। এখন নেয় আমার জমীনের আকাশ সীমা, আমার বোনকে মেরে ঝুলিয়ে রাখে কাটাতারে, আমার বুকের ওপর দিয়ে ট্রেন চালায়, আমার ছেলে-মেয়ের মুখের ইলিশগুলো কেড়ে নিয়ে যায়। আর তীব্র খড়ায় আমাকে পানি দেওয়া বন্ধ করে দেয়, অনাহারে মরে যায় আমার সন্তান। উপহার হিসেবে রাজনীতির জলে ভাসিয়ে দেয় আমার সংসার। তবু কিন্তু সে আমার বন্ধু, প্রাণের বন্ধু।
বলছিলাম, আমার ভাই ইখতিলাফ ওরফে পাকিস্তান, আমার বন্ধু ইফতিরাক ওরফে ভারত আর বোকা আমি ইনকিলাব নামক বাংলাদেশের কথা।
হায়, তখন যদি ইসলাম নামের সেই মায়ের কথা শুনতাম। যদি রক্তের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ থাকতাম, তবে আজকের সকালগুলো হয়তো আরো সুন্দর হতে পারতো।
তাই আসুন আমরা দল- মত ভুলে গিয়ে এক নবীর(সাঃ) উম্মত হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হই। এতটাই ঐক্যবদ্ধ হই যেন কেউ নিজেদের স্বার্থে আমাদের বন্ধনে ফাটল ধরাতে না পারে। আফসোস করে যেন আর বলতে না হয় “দুই ভাইয়ের বন্ধন ভাঙলো কেন”।।