“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় সাহাবীদের বারবার ঐক্যের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়েছেন।সাহাবীরা ছিলেন তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষজন।তাঁরাও চেষ্টা করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেখে যাওয়া আদর্শের উপর জীবন কাটাতে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপস্থিতিযে সাহাবীদের মধ্যে বিভেদ ভুলে ঐক্য বজায় রাখার প্রথম প্রচেষ্টা এই ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর তাঁকে দাফন করার আগেই একজন খলিফা বা নেতা নির্বাচনের দাবি উঠে। ‘কে হবে খলিফা’ এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে সাহাবীদের মধ্যেই বিভেদের সম্ভবনা ঘনীভূত হতে থাকে।
প্রথমে, আনসারগণ ‘সাকিফা বানু সাঈদা’ নামক স্থানে একত্রিত হয়ে নতুন নেতার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। তারা চাইছিলেন তাদের মধ্য থেকেই যেন কেউ খলিফা হওয়ার সম্মান অর্জন করেন । এর কারণ তারা ইসলামের জন্য অনেক বেশি ত্যাগ তিতিক্ষা করেছেন।
তবে, আনসারগণ ছাড়াও দুইটি দল খলিফা নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহ দেখালো।
দল দুটি হলো মুহাজিরগণ ও বনু হাশিম গোত্র। বনু হাশিম গোত্র চাইছিলো আলী (রা) যেন খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হোন। সেখানে আলোচনার এক পর্যায়ে আবু বকর (রা.) বলেন যে, খিলাফতের জন্য কুরাইশের লোকদের অগ্রাধিকার থাকা উচিত, কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কুরাইশ বংশের ছিলেন । তিনি উমর (রা.) ও আবু উবাইদা (রা.)-কে খলিফা হিসেবে প্রস্তাবও করেন ।।কিন্তু উমর (রা.) সাথে সাথেই আবু বকর (রা.)-এর হাতে বাইআত (শপথ) করেন। তাঁর দেখাদেখি উসমান বিন আফফান (রা.)ও আবু বকর( রা) এর হাতে বাইয়াত নেন। একসময় সকল সাহাবী আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর হাতে বাইয়াত নেন। এইভাবে সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে আবু বকর (রা.) ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
খলিফা নির্বাচন নিয়ে প্রথমের দিকে কিছুটা মতপার্থক্য থাকলেও সাহাবীরা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে যুক্তি ও পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে খলিফা নির্বাচন করা করেন।
আমরা হলে এই ক্ষেত্রে কি করতাম? ‘আমিই যোগ্য’ ‘আমিই যোগ্য’ বলে শুধু ক্ষান্ত হতাম না, অন্য মতের কাউকে কিভাবে ছোট করা যায় সেই চেষ্টাও করতাম।কাদা ছোড়াছুড়ি করে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতাম। অথচ, তাঁরা খলিফা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের প্রাধান্য বজায় পাওয়ার চেয়ে উম্মাহর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখাকে অধিক গুরুত্ব দিলেন”