উম্মতের ঐক্য ৭

উম্মতের ঐক্য :-

উম্মতের ঐক্য বলতে উম্মতের মধ্যে একতাকে বোঝানো হয়। পুরো মুসলিম বিশ্বকে এক হওয়ার জন্য অবশ্যই উম্মতের ঐক্যমত থাকা খুব জরুরী। ঐক্য না থাকলে সহজেই যে কোন তৃতীয় দল এসে যে কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। এইজন্য মুসলিম উম্মাহকে এক হওয়ার জন্য এবং ইসলামি খেলাফতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবশ্যই আমাদের সকল মুসলিম উম্মাহকে একসঙ্গে ঐক্যমত রাখতে হবে। যেমন মুসলিম উম্মাহ হল তারা যাদের আকিদা এক কিন্তু কাজে ভিন্ন মত থাকলে এদেরকে আলাদা করা উচিত নয়। ইসলামের বেসিক জ্ঞানগুলো সম্পর্কে যারা অবহিত এবং বেসিক জ্ঞানগুলো যারা বিশ্বাস করে এবং মানে তাদেরকে আমরা মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। যাদের আকিদায় শির্ক নেই এবং বিদআত নেই কুফরি নেই এমন সমস্ত মানুষ ব্যতীত সকল মানুষকে আমরা মুসলিম উম্মাহ হিসেবে গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ। মাযহাব নিয়ে মারামারি না করে আমাদের উচিত সকল মুসলিম উম্মাহকে এক থাকা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলা না করা। যেমন এই বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে অধিকাংশই মুসলিম বসবাস করছেন কিন্তু তারপরেও আমরা ঐক্যবদ্ধ নই বলে তৃতীয়পক্ষ বা নাসারা আমাদের মধ্যে সহজেই বিবাদ তৈরি করে দিতে পারছে এবং আমাদের ধ্বংস করে ফেলছে। কিন্তু আমরা যদি এক হতাম আমরা সকল মুসলিম উম্মাহ যদি এক থাকতাম আমাদের শক্তি যদি এক করতাম তাহলে অবশ্যই এই সামান্য অন্য ধর্মের মানুষেরা কিছুই করতে পারত না। বরং আমরা তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে মুসলিম বানিয়ে ফেলতে পারতাম ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আজ আমরা মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ নয় বলে দাওয়াতি কাজ তো করতেই পারছি না বরং নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারছি না।
ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে আমরা ঐক্যমতের গুরুত্ব বুঝাতে পারি ইনশাআল্লাহ।
গল্পটি হল:-
একদা একসময়ে এক দেশে এক স্বৈরাচারী শাসক বেশ বীজ বপন করে ফেলেছে। সেই গাছের শিকড় বেশ গভীরে চলে গিয়েছিল। সে এমন শুরু করেছিল যে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথাই বলতে পারতো না। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সেই সব কিছু করতে সদা প্রস্তুত। সেই দেশের জনগণ কোন অধিকার চাইলেই তাদেরকে গুম খুন এবং হত্যা করা হতো তাও গোপনে। আর গণহত্যার মতো হত্যাকাণ্ড চালানোর পরেও সেখানে বলা হত এগুলো নাকি অভিনয়।
কিন্তু এই খুন ঘুম গণহত্যা এগুলো শিকার শুধু তারাই হল যারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে এর বিরুদ্ধে কথা বলতো। একদলকে গুম করা হতো খুন করা হতো অপর দল কিছুদিন পরে আবার জেগে উঠতো কিন্তু একসঙ্গে কেউ জাগেনি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একেক সময় বৈঠক করতো। কিন্তু কেউই একসঙ্গে যায়নি। সবাই ভাবতো আমি তো তার দলের নয়, তাহলে কেন যাব ! আমি আমার দলের সঙ্গে যাব।
এভাবে দফায় দফায় মানুষ হত্যা হতে থাকে সেই স্বৈরাচার সরকারের হাতে। কিন্তু এর প্রতিকার কেউ জানে না কবে হবে। তারপর শুরু হল এক মহা আয়োজন। ছোট্ট কিছু আন্দোলন থেকেই শুরু হয়ে গেল বিশাল আন্দোলন । শুরু হয়ে গেল গৃহযুদ্ধের মত একটা অবস্থা। সকলেই তখন বুঝতে পারলো আমাদের সকলের চাওয়া একই আমরা যে যেই দলের মতের যাই হই না কেন আমাদের একটাই চাওয়া তা হল আমরা স্বাধীনভাবে নিজেদের বাক স্বাধীনতার সঙ্গে এই দেশে বসবাস করতে চাই। তারপর ছোট্ট আন্দোলনটা হয়ে গেল বৃহৎ একটা আন্দোলন ঘরে ঘরে রাস্তায় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে সকল জায়গায় আন্দোলনের শুরু। অনেক হত্যা ঘুম খুন এগুলোর পরেও সকল জনমতের ঐক্যতার জন্য সেদিন সেই স্বৈরাচারের পতন ঘটল আলহামদুলিল্লাহ।

যেই পতন অনেক আগেই ঘটতে পারতো ।শুধুমাত্র মতের ভিন্নতার কারণে দফায় দফায় মানুষকে খুন গুমের শিকার হতে হয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে এই ঐকমতের কারণেই কিন্তু তারা স্বাধীনতা পেলো।

ঠিক একইভাবে আমরা যদি পৃথিবীর সকল মুসলিম উম্মাহ এক ঐক্যবদ্ধ থাকি ,আমরা যদি ভাবি যে আমাদের আকিদা তো একই আমরা তো সবাই জান্নাতেই যেতে চাচ্ছি। আমরা তো সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকিদা পোষণ করছি তার অনুসরণই করছি । তাহলে অবশ্যই ইনশাআল্লাহ আমরাও এই পৃথিবীতে ইসলামের খেলাফত অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। এটি আমাদের জন্য খুবই সহজ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তখন দ্বিতীয় তৃতীয় অন্য কোন দলই আমাদেরকে বিভক্ত করতে পারবে না । বিভিন্ন আকিদার ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দিতে পারবে না । কারণ আমরা আমাদের আকিদা সম্পর্কে অবগত থাকবো।

তাই আমি মনে করি উম্মতের ঐক্য থাকাটা খুবই প্রয়োজন। আমাদের সকলকে সম্মানের সঙ্গে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য, ইসলামের খেলাফত অর্জন করার জন্য অবশ্যই অবশ্যই আমাদের ঐকমত থাকা খুব জরুরী। ভিন্নমত পোষণ না করে সকলের সঠিক মত, সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করে নেওয়া আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারন আমরা সকলেই একই পথের পথিক। আমাদের এই ভিন্নমত আমাদের জন্য এক কালশত্রুকে তৈরি করে দিয়েছে। যারা সহজে আমাদের মধ্যে ফাটল তৈরি করে আমাদের উম্মতের মধ্যে চির ধরিয়ে দিয়ে আমাদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু আনফরচুনেটলি আমরা সেটা বুঝতেই পারছি না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে হেফাজত করুন সকল মুসলিম উম্মাহকে এক হওয়ার তৌফিক দান করুন ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে ঝামেলা না করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সমস্ত বিধি-বিধান বিধি নিষেধ মানার তৌফিক দান করুন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল সুন্নাতকে মেনে চলার তৌফিক দান করুন ।আমিন ইয়া রব্বাল আল-আমিন।

অপেক্ষা করুন

0