হযরত হাসান (রা.) । যিনি ছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রাণপ্রিয় নাতি , ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.) ও ফাতিমা (রা.) এর জৈষ্ঠ পুত্র। হযরত হাসান (রা.) ছিলেন অত্যন্ত ইবাদতগুযার, ন্যায়পরায়ণ , মুত্তাক্বী-পরহেযগার এবং জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত একজন সাহাবী।
আবু বকরাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ইবনু আলী (রা.) সম্পর্কে বললেন,
“إِنَّ ابْنِى هَذَا سَيِّدٌ، ولَعَلَّ ﷲَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيْمَتَيْنِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ.”
অর্থাৎ, আমার এ সন্তান (দৌহিত্র) একজন নেতা। সম্ভবত তার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের দুটি বড় দলের মধ্যে মীমাংসা করাবেন।
[বুখারি হাদিস ২৭০৪, মিশকাত হাদিস ৬১৩৫]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর এই হাদিস সত্য প্রমাণিত হয় ৬৬১ খ্রীষ্টাব্দে সংঘটিত হাসান (রা.) ও মুআবিয়া (রা.) এর মধ্যকার শান্তি চুক্তির মাধ্যমে। তৎকালীন সময়ে হযরত মুআবিয়া (রা.) আরবের লেভান্ট অঞ্চলের (আধুনিক সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, প্যালেস্তাইন) গভর্নর ছিলেন। সেসময় বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ফলে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) ও মুআবিয়া (রা.) এর মধ্যে সামরিক সংঘাত (সিফিনের যুদ্ধ) হয়েছিল। আলী (রা.) এর শাহাদাতের পর কুফার জনগণ হযরত হাসান (রা.) কে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করে। হযরত হাসান (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর শিয়ানে আলীরা হযরত হাসান (রা.) কে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রলুব্ধ করতে থাকে। কিন্তু সমঝদার ও দ্বীনের একনিষ্ট অনুসারী হযরত হাসান (রা.) তাদের এ ষড়যন্ত্রের জালে পা দেননি। তিনি বুঝে যান যে, এ সমস্ত নামধারী শিয়ারা প্রতারক ও ধোঁকাবাজ। এরা মুসলমানদের একতা চায় না। চায় বিভেদ ও বিচ্ছেদ। যাতে করে মুসলমানদের শক্তি সামর্থ দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে যায়। অত:পর বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা ক্রমে হযরত হাসান (রা.) বুঝতে পারেন যে মুয়াবিয়া (রা.) এর সাথে সন্ধিচুক্তিই একমাত্র সমাধান। মুসলমানদের একতা ও ভ্রাতৃত্বই পারে সকল কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে। অবশেষে হযরত হাসান (রা.) ২ রবিউল আউয়াল ৪১ হিজরি সনে (১ আগষ্ট, ৬৬১) হযরত মুআবিয়া (রা.) এর কাছে সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে খিলাফত হস্তান্তর করেন। এই সন্ধিচুক্তির কারণে হযরত হাসান (রা.) কে আক্রমনের স্বীকার হতে হয়েছিল তবুও তিনি শুধুমাত্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যকার ঐক্য বজায় রাখার জন্য এতবড় ত্যাগ স্বীকার করেন।
পরবর্তীতে হযরত মুয়াবিয়া (রা.), হযরত হাসান (রা.) কে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। যেখানে তিনি লিখেছিলেন যে হযরত হাসান (রা.) তার পরে রাজত্বের উত্তরাধিকারী হবেন এবং এর ভিত্তিতে তিনি হাসান (রা.) এর সাথে শান্তি স্থাপন করেছিলেন। হাসান (রা:) যখন চিঠিটি পড়েছিলেন তখন তিনি মন্তব্য করেছিলেন: “তিনি এমন একটি বিষয়ে আমাকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করছেন, যা আমি যদি তার কাছে আকাঙ্ক্ষা করতাম তাহলে কখনো আত্মসমর্পণ করতাম না।”