উম্মতের ঐক্য ১৪

উম্মতের ঐক্য

মুসলিম উম্মাহ পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং নিজেদের একতা ও সংহতি রক্ষা করা ইসলামের একটি মৌলিক ফরয। তেমনি সুন্নাহর অনুসরণ তথা আল্লাহর রাসূলের শরীয়ত এবং তাঁর উসওয়াহ ও আদর্শকে সমর্পিত চিত্তে স্বীকার করা এবং বাস্তবজীবনে চর্চা করা তাওহীদ ও ঈমান বিল্লাহর পর ইসলামের সবচেয়ে বড় ফরয।
ইসলাম তাওহীদের দ্বীন এবং ঐক্যের ধর্ম। এখানে শিরকের সুযোগ নেই এবং অনৈক্য ও বিভেদের অবকাশ নেই। ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ-এক আল্লাহর ইবাদত, এক আল্লাহর ভয়।

এই তাওহীদের সমাজকে ইসলাম আদেশ করে সীরাতে মুস্তাকীম ও সাবীলুল মুমিনীনের উপর একতাবদ্ধ থাকার, নিজেদের ঐক্য ও সংহতি এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষা করার, ইজমা ও সাবীলুল মুমিনীনের বিরোধিতা পরিহার করার এবং এমন সব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার, যা উম্মাহর একতা নষ্ট করে এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।

সাবীলুল মুমিনীন থেকে বিচ্যুত হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কুফর এবং পরস্পর কলহ-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ।
কথাগুলো যদিও দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট এবং উম্মাহর সর্ববাদীসম্মত আকীদা তবুও পুনস্মরণের স্বার্থে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হচ্ছে।

إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ ۞ وَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ كُلٌّ إِلَيْنَا رَاجِعُونَ ۞

(তরজমা) ‘নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমার ইবাদত কর। কিন্তু তারা নিজেদের দ্বীনকে নিজেদের মাঝে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে। (তবে) সকলেই আমার কাছে ফিরে আসবে।-সূরাতুল আম্বিয়া (২১) : ৯২-৯৩

وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ ۞ فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ۞ فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّى حِينٍ ۞

(তরজমা) ‘নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমাকে ভয় কর। এরপর তারা নিজেদের দ্বীনের মাঝে বিভেদ করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেল। প্রত্যেক দল (নিজেদের খেয়ালখুশি মতো) যে পথ গ্রহণ করল তাতেই মত্ত রইল। সুতরাং (হে নপয়গাম্বর!) তাদেরকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মূর্খতায় ডুবে থাকতে দাও।-সূরা মুমিনুন (২৩) : ৫২-৫৩

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস র. অন্য আয়াতের তাফসীরে বলেছেন-

تبيض وجوه أهل السنة والجماعة، وتسود وجوه أهل البدعة والفرقة

অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর মুখ উজ্জ্বল হবে এবং আহলুল বিদআহ ওয়াল ফুরকার মুখ কালো হবে।-তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৫৮৪

এ থেকে বোঝা যায়, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর অনুসারীগণ ‘আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করার এবং বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন না হওয়ার’ আদেশ পালন করছেন, যার পুরস্কার তারা দুনিয়াতে পেয়ে থাকেন পরস্পর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মাধ্যমে। আর আখিরাতের পুরস্কার এই হবে যে, তাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে। পক্ষান্তরে যারা কালিমা পাঠ করেও সুন্নাহ ছেড়ে বিদআ অবলম্বন করবে কিংবা উম্মাহর ঐক্যে আঘাত করে ‘আলজামাআ’ এর নীতি থেকে বিচ্যুত হবে তাদেরও আশঙ্কা আছে আয়াতের কঠিন হুঁশিয়ারির মাঝে পড়ে যাওয়ার।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর ইমামদের মাঝে শাখাগত বিষয়ে দলিলের ভিত্তিতে যে মতপার্থক্য, তা যেমন বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা নয় তেমনি এ আয়াতের হুঁশিয়ারিরও আওতাভুক্ত নয়। কারণ এ জাতীয় মতপার্থক্যের পরও তাঁরা একতাবদ্ধ ছিলেন এবং তাঁদের মতপার্থক্য-আল্লাহর পানাহ-স্পষ্ট বিধান থেকে বিমুখতার কারণেও ছিল না। তা তো ছিল ‘বাইয়্যিনাত’-এর উপর ইজমা ও ইত্তিহাদের পর কিছু শাখাগত বিষয়ে দলিলভিত্তিক ইখতিলাফ।

দুই মুসলিমের মাঝে মতভেদ হলে তখন আর এ সকল হক রক্ষা করতে হবে না; বরং সেটিই তো আসল ক্ষেত্র এই হকগুলো রক্ষা করার। সাধারণত মতপার্থক্য দেখা দিলেই এই হকগুলো বিনষ্ট করা হয়। সুতরাং ঐ ক্ষেত্রেই যদি সকলে তা রক্ষায় সতর্ক না হয় তাহলে আর সুন্নাহর অনুসরণ এবং হাদীস মোতাবেক আমলের কী অর্থ থাকে?

এই উম্মতের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাওহীদ ও ঈমান এবং ঈমানী ভ্রাতৃত্বের উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
গোটা উম্মতের মাঝে প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হওয়া এবং ভালো কাজে সহযোগিতা আর জুলুম ও অন্যায় কাজে সহযোগিতা পরিহারের প্রেরণা জাগ্রত হওয়া।
আল্লহ্ তৌফিক দান করুন। আমীন।

অপেক্ষা করুন

0