উম্মতের ঐক্য ১৩

“হযরত উমর রা. ও হযরত হিশাম ইবনে হাকীম রা.-এর মধ্যকার বিরোধের কথা বর্ণিত হয়েছে বুখারী শরীফ এর একটি হাদিস এ। যা সাময়িক ঝগড়ার রূপ ধারণ করেছিল। মতবিরোধটি হয়েছিল কুরআনের কিরাত নিয়ে। হযরত উমর রা. হযরত হিশাম রা.কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাজির করে তার বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকের পড়া শুনলেন। এরপর প্রত্যেককেই বললেন-

هكذا أنزلت

অর্থাৎ এভাবে কুরআন নাযিল হয়েছে।-সহীহ বুখারী ৮/৬৩৯-৬৪০ (ফাতহুল বারী)

এ ধরনের আরেকটি ঘটনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছেন-

كلاكما محسن، فاقرآ

তোমাদের দুজনই ঠিক পড়েছ। তাই পড়তে থাক।-সহীহ বুখারী ৮/৭২০ (ফাতহুল বারী)

বনু কুরাইজার ঘটনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীর মর্ম বোঝার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ হয়েছিল। উভয় দল হাদীসের মর্ম যা বুঝেছেন সে অনুযায়ী আমল করেছেন। এরপর সরাসরি আল্লাহর রাসূলের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু তিনি কোনো দলকে তিরস্কার করেননি। বিস্তারিত ঘটনা উদ্ধৃতিসহ সামনে আসছে। তো দেখুন, প্রথম ঘটনা ছিল কিরাআতের পার্থক্য সংক্রান্ত, যা সুন্নাহর বিভিন্নতার মধ্যে শামিল। এই মতভেদের ক্ষেত্রে যখন আল্লাহর রাসূলের শরণ নেওয়া হল তিনি বিবাদ মিটিয়ে দিলেন, কিন্তু ইখতিলাফ বহাল রাখলেন এবং বললেন, উভয় পদ্ধতি সঠিক।এই হাদিস গুলো উম্মতের জন্য অনেক বড় একটা শিক্ষা।যেটা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে উম্মতের মাঝে ইখতেলাফ থাকতেই পারে যেমন এখতেলাফ ছিল সাহাবীদের মধ্যেও। এখতেলাফ থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে একতা ছিল। যেকোন যুদ্ধে এক ডাকে সবাই হাজির হয়েছিলেন সবাই। অথচ আজ উম্মত এখতেলাফি বিষয় নিয়ে ঝগড়া মারামারিতে লিপ্ত।
একজনের সাথে অন্য জনের মতের মিল না হলেই একে অন্য কে কাফির বলে সম্বোধন করছি খুব সহজেই। আজ ছোট খাট বিষয় গুলা নিয়ে একে অন্যের চেহারা পর্যন্ত দেখতে রাজি না।
অথচ এটা তো আল্লাহর রাসূলের ত্বরীকা নয়। আজ ফর‍য কোন হুকুম নিয়ে উম্মতের মধ্যে কোন ইখতেলাফ না থাকলেও মুস্তাহাব,সুন্নাত,নফল এর মতপার্থক্য নিয়ে উম্মত এত বেশী বহাসে লিপ্ত হয়, এই বহাসের সময় গুলা যদি শুধু একজন মানুষ কে জাহান্নাম থেকে বাচানোর জন্য ফিকির করত!! আমাদের অবস্থা আজ এমন হয়ে দাড়িয়েছে কেউ আমাদের মতের বিরুদ্ধে একটা কথা বললেও আমরা আর তার কোন কথাকেই মূল্য দেই না!! অথচ সে ব্যক্তি আমাদের থেকে অনেক অনেক অনেক বেশী গুন জ্ঞানী।
আমরা তার থেকেই জ্ঞান নি, যার সাথে আমাদের মত মিলবে! অথচ সাহাবা দের মধ্যেও মত পার্থক্য ছিল ইমাম গনের মধ্যেও মত পার্থক্য ছিল। এবং মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তারা একে অন্যকে সম্মান করতেন।একে অন্যের মত কেও সম্মান করতেন,যদিও দু’জনের মত দুরকম। কিন্তু আজ আমাদের কী হয়ে গেল আমরা আমাদের মতের বাইরে কেউ কথা বললেই তার সব কিছুই খারাপ করে দেই! কিন্তু আজ মুসলমান যেই অবস্থানে দাড়িয়েছে এই অবস্থানে সকলের উচিত এক হয়ে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করা।
উম্মত যদি এক না হয় তাহলে এখন কীই বা অত্যাচারীত বা নিপীড়িত হচ্ছে!! আরো অত্যাচার অপেক্ষা করছে!আল্লাহ মাফ করুন, রহম করুন।
সারা পৃথিবীতে মুসলমানের উপর জুলুম অত্যাচার ঠেকাতে হলে অবশ্যই মুসলমান দের কে এক হতে হবে। পুরো পৃথিবীর সকল মুসলমান একটা সম্পূর্ন মানবদেহের মতই।
মানব দেহের প্রত্যেক টা অঙ্গ অন্তত্য জরূরী।তাই দেহের প্রত্যেক টা অংশের ই যত্ন নেয়া অতীব জরূরী। যেকোন জায়াগায় ব্যাথা পেলে যেমন মস্তিষ্ক যেমন উপলব্ধি করে ঠিক তেমনি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মুসলমান নির্যাতিত হলে, হোক সে আমেরিকান বা আফ্রিকান,চিন বা জাপানী, ভারতীয় বা বাংলাদেশী পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষ সেটা উপলব্ধি করতে হবে। কিন্তু আজ মুসলমান এমন সব ইস্যু নিয়ে মত্ত আছে তার ব্রেইন আজ সাড়া দেয়না। মুসলমান এর ব্রেইন আজ প্যারালাইসড হয়ে যাচ্ছে।
তার একটা অঙ্গ ব্যাথা পেলেও সেই ব্যাথার উদ্দীপনা মস্তিষ্কে পৌছায় না। আমাদের মস্তিষ্ক আজ সত্যিই প্যারালাইজড!! এই প্যারালাইজড মস্তিষ্ক শুধু ওঁৎ পেতে থাকে অন্যের ভুল ধরার জন্য।
আমরা আমাদের মূল কাজ থেকে সরে গিয়ে গীবতে লিপ্ত হচ্ছি,একে অন্যের পিছনে লাগছি! অথচ আমাদের তো দরকার এসব ইখতেলাফি ইস্যুকে সাইডে রেখে এক হয়ে প্রতিকূলতা কে প্রতিহত করা। এক তো হওয়াই লাগবে!তো আজ থেকে কেন নয়??
আমরা কি ‘একতাই বল’ গল্প টা ভুলে গিয়েছি?? যেখানে বাবা তার চার ছেলে কে একটি করে লাঠি দিয়েছে ভাংগার জন্য।
সবাই লাঠি গুলো খুব সহজে ভেংগে ফেলেছে। এবং বাবা এবার চারটি লাঠি এক সাথে বেঁধে প্রত্যেক ছেলে কে দিয়েছিল ভাংগার জন্য। কিন্তু সবাই একে একে ব্যর্থ হয়েছে এই লাঠিগুলোর বাইন্ডিং ভাংতে।
গল্পের মোরাল এইযে, আমরা যখন আলাদা আলাদা থাকব তখন আমাদের কে যে কেউ এসে ভেংগে গুড়িয়ে দিতে পারবে। কিন্তু যখন আমরা একতাবদ্ধ হব তখন কেউ সহযে আমাদের ক্ষতি করতে পারবেনা। তেমনি মুসলমান রা আজ ঐক্য বদ্ধ নয় বলেই আজ গাজ্জার মুসলমান এত মার খাচ্ছে পরাশক্তির কাছে। আজ মুসলমান রা ঐক্য বদ্ধ নয় বলেই উইঘরে মুসলমান রা মার খাচ্ছে। আজ মুসলমান ঐক্য বদ্ধ নয় বলেই সিরিয়ায় মুসলমান মার খাচ্ছে। আজ মুসলমান ঐক্য নয় বলেই ভারতে গরু কুরবানী করার অপরাধে মুসলমান মার খাচ্ছে। মুসলমান যদি আজ ঐক্য বদ্ধ হত তাহলে এই সকল পরাশক্তি মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারত না। খোরাসানের বিজয় পুরো পৃথিবীর মাতবর দের টনক নাড়িয়ে দিয়েছে।খোরাসানের বিজয়ের পিছনে প্রধান কারন কিন্তু ঐক্যবদ্ধতা।
আজ তারা ঐক্য বদ্ধ হতে পেরেছিল বলেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছে আলহামদুলিল্লাহ।এভাবেই মুসলমান কামীয়াব হতে চাইলে ঐক্য বদ্ধ হওয়ার কোনই বিকল্প নেই।
কোনই বিকল্প নেই।ইখতেলাফ থাকবেই কেয়ামত পর্যন্ত। কিন্তু এগুলা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা কখনোই কাম্য নয়।।সকল মুসলমানদের এখন ইমানী দায়িত্ব ঐক্য বদ্ধ হয়ে পরাশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

অপেক্ষা করুন

0