উম্মতের ঐক্য
আমরা সবাই এক জায়গা হতে এসেছি, মৃত্যুর পর সবাই আবার এক জায়গায় সমবেত হবে। তবুও মানুষের ভালোবাসার মধ্যে কত ফাটল! সে এক জায়গা দিয়ে গেলে, অন্যজন আর সে জায়গা দিয়ে যেতে চান না। সাহাবিদের যুগ থেকে ইখতেলাফ হয়ে আসছে তাই বলে কি তাদের মধ্যে ইফতিরাকের সৃষ্টি হয়েছে। একজন আরেকজনকে বাতিল বলেছে? বলে নাই। কিন্তু বর্তমান উম্মাহদের
মধ্যে বন্ধন আর লক্ষ্য করা যায় না। বর্তমান উম্মাহদের মাঝে ইখতেলাফ সৃষ্টি হলে সেটা ইফতিরাক পর্যন্ত চলে যায়। তার কাছে মনে হয় সে নিজে ঠিক আর অন্য সবাই বাতিল। রাসূল (সা) বলেছেন,
❝ তোমরা ততদিন পর্যন্ত জান্নাতে যেতে পারবে না, যতদিন না তোমরা একে অপরকে ভালোবাসছো। আর আমি কি তোমাদের বলে দিবো? কীভাবে তোমাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে? সাহাবীরা বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ বলে দিন, তিনি বললেন তোমরা একে অপরকে সালাম দিতে শিখো।❞
ইসলাম তাওহীদের দ্বীন এবং ঐক্যের ধর্ম। এখানে শিরকের সুযোগ নেই এবং অনৈক্য ও বিভেদের অবকাশ নেই। ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ-এক আল্লাহর ইবাদত, এক আল্লাহর ভয়।
এই তাওহীদের সমাজকে ইসলাম আদেশ করে সীরাতে মুস্তাকীম ও সাবীলুল মুমিনীনের উপর একতাবদ্ধ থাকার, নিজেদের ঐক্য ও সংহতি এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষা করার, ইজমা ও সাবীলুল মুমিনীনের বিরোধিতা পরিহার করার এবং এমন সব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার, যা উম্মাহর একতা নষ্ট করে এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।
সাবীলুল মুমিনীন থেকে বিচ্যুত হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কুফর এবং পরস্পর কলহ-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ।
নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমার ইবাদত কর। কিন্তু তারা নিজেদের দ্বীনকে নিজেদের মাঝে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে। (তবে) সকলেই আমার কাছে ফিরে আসবে।-সূরাতুল আম্বিয়া (২১) : ৯২-৯৩
বর্তমান উম্মাহের পরিস্থিতি একজন আরেকজনের গীবত গেয়ে বেড়াচ্ছে,,, সে এরকম করছে অমুক ঐরকম করছে,,, তার সাথে এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে তারা গীবত, ঝগড়া বিবাদে মেতে উঠছে। কারো মাঝে মতবেদ থাকলে তাকে বাতিল বলা যাবে না,,,কারণ উদ্দেশ্য এক, লক্ষ্য এক। আল্লাহ তা’ আলা বলেন,
“মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দাও। আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।”
মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। তাই আমাদের সকলকে একসাথে থাকতে হবে। উম্মতের ঐক্যের মাঝে মুমিনগণের জয় নিশ্চিত। তোমরা নিজেদের মাঝে ঝগড়া ফাসাদে লিপ্ত হইয়ো না। এই মুসলিম উম্মাহ ততদিন বিজয়ী হতে পারবে না যতদিন না এই মুসলিম উম্মাহ পরস্পর এক হচ্ছে, বন্ধু হচ্ছে। এই উম্মাহের উচিত ইখতিলাফ কে প্রাধান্য না দিয়ে বরং তাওহিদের দিকে এক থেকে শক্ত খুঁটি গড়ে তোলা। একটা মানুষের মুখের স্বাদ একেকসময় যেমন একেকরকম অনুভূত হয় তখন কি সেই মানুষ টা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়? দেয় না তো। তাহলে যদি এই খাওয়া বাদ দিতে পারি না,,, তেমনি চলতে ফিরতে আমরা অনেক মানুষের সাথে দেখা হয় যাদের মতামত ভিন্ন, তাহলে মতামতগত ভিন্নতার কারণে কি করে আমরা অন্যদের বাতিল করে দেই? মুমিন বান্দার আচরণ একেক জায়গায় একেক হতে পারে না। যারা মৌলিক বিষয়ে মতভেদ করে বিচ্ছিন্ন হল তাদের সাথেও জুলুম-অবিচার করা যাবে না; তাদের সাথেও ন্যায়বিচার করতে হবে।
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে সেভাবে ভয় কর যেভাবে তাকে ভয় করা উচিৎ। এবং (সাবধান) তোমাদের মৃত্যু যেন এ অবস্থায়ই আসে যে, তোমরা মুসলিম।
তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভেদ করো না। স্মরণ কর যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে তখন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তোমাদের অন্তরসমূহ একে অপরের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছ। তোমরা তো ছিলে অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে। আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের মুক্ত করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা পথপ্রাপ্ত হও।
তোমাদের মধ্যে যেন এমন একটি দল থাকে, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, সৎকাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজে বাধা দিবে। আর এরাই তো সফলকাম।
‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এবং মতভেদ করেছিল তাদের নিকট সুস্পষ্ট বিধানসমূহ পৌঁছার পর। এদের জন্যই রয়েছে ভীষণ শাসিত্ম।
‘যেদিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের মুখ কালো হবে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কুফরি করলে ঈমান আনার পর?! সুতরাং স্বীয় কুফরির দরুণ শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর।
‘পক্ষান্তরে যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে।’-সূরা আলে-ইমরান (৩) : ১০২-১০৭
ঐক্য প্রসঙ্গে ইসলামের এমন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও মুসলিম মিল্লাত আজ শতধাবিভক্ত। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করি, মুসলমানরা বিষয়টি হৃদয় দিয়ে অনুভব করে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকটা বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।