“খন্দকের যুদ্ধ: উম্মতের ঐক্যের দৃষ্টান্ত
পটভূমি:
খন্দকের যুদ্ধ, যা ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়, মদিনার মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বড় পরীক্ষা ছিল। এই যুদ্ধে মক্কার কুরাইশ ও তাদের মিত্র বাহিনী বিশাল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে মদিনা আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসে। মদিনায় অবস্থানকারী মুসলমানদের সংখ্যা কম ছিল এবং তাদের সামরিক শক্তিও সীমিত ছিল। মদিনাকে রক্ষা করার জন্য এই পরিস্থিতিতে উম্মতের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।
ঘটনা:
মদিনা আক্রমণের হুমকির মুখে যখন মুসলমানরা একটি সমাধানের সন্ধান করছিল, তখন হযরত সালমান আল-ফারিসি (রাঃ) এক অনন্য কৌশলের প্রস্তাব দেন। তিনি পারস্যের একটি যুদ্ধ কৌশলের উল্লেখ করে পরামর্শ দেন যে, মদিনার আশেপাশে একটি খাল খনন করা হোক, যা শত্রুদের সরাসরি আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করবে।
হযরত সালমানের প্রস্তাব মহানবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পছন্দ করেন এবং উম্মতের সকল সদস্যকে এই কাজের জন্য একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান। মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও এই খাল খননের কাজে অংশগ্রহণ করেন। মদিনার প্রায় তিন হাজার মুসলমান, সকলেই একত্রে কঠোর পরিশ্রম করে এবং খাল খননের কাজে নিয়োজিত হয়।
মুসলমানদের এই ঐক্য ও সহযোগিতার ফলে মদিনার চারপাশে একটি গভীর ও প্রশস্ত খাল খনন করা হয়। যখন কুরাইশ ও তাদের মিত্ররা মদিনায় পৌঁছায়, তারা এই বিশাল খাল দেখে হতবাক হয়ে যায়। তারা মদিনায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়নি এবং অবশেষে একটি দীর্ঘ অবরোধের পর তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
ফলাফল ও শিক্ষণীয়:
এই খন্দকের যুদ্ধ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যখন মুসলিম উম্মাহ একত্রিত হয়ে এক কাতারে দাঁড়ায় এবং একে অপরের পাশে থাকে, তখন আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে তাদের মুক্তি দেন। মুসলিমদের ঐক্য, সংহতি এবং পারস্পরিক সহযোগিতা তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি, যা তাদেরকে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম করে তোলে।
উম্মতের ঐক্যের এই ঘটনা থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, আমাদের পারস্পরিক বিরোধ ও ভেদাভেদ ভুলে একত্রে কাজ করা উচিত। উম্মতের কল্যাণ ও সংহতির জন্য আমরা যদি একসাথে কাজ করি, তাহলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন এবং আমাদের জন্য বিজয় দান করবেন।
”