উম্মতের ঐক্য ১০

হজরত আবু মূসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য দেয়ালস্বরূপ, যার একাংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে। অতঃপর তিনি তার হাতের আঙুলগুলো প্রবিষ্ট করে দেখালেন’। (সহিহ বুখারি)। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য এক শরীরসদৃশ। যদি এর একটি অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে এর প্রভাবে সারাশরীর ব্যথিত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়’। অদৃশ্য এ শক্তিই মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের গোপন রহস্য।
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.) বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের জন্য ওই সময় চূড়ান্ত বিজয়ের প্রস্তুতি নেন, যখন মুসলমানদের পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং শামের নেতৃস্থানীয়রা একই প্লাটফর্মে জড়ো হন। ইতিহাসের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মুসলমান কোনো একটি যুদ্ধেও সফলকাম হতে পারেনি; যতক্ষণ না তাদের ঐক্য ও সংহতির সুদৃঢ় বন্ধন স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু যখন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজস্ব মত-পথ ও চিন্তাধারায় খেয়ালি বিচরণে গা ভাসিয়ে নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট মতপার্থক্য শত্রুতার রূপ নেবে; তখন সফলতার আর কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসবে না। বর্তমান মুসলিম উম্মাহ অনৈক্য ও অসংহতির মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত। দুনিয়াতে আজ মুসলমানদের রয়েছে বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ তাদের দখলে। তারপরও দুনিয়ার শক্তির কাছে তারা নত। তাদের দেখে বিদ্রুপের হাসি হাসছে বাতিল শক্তি। কিন্তু মুসলমানদের এ অবস্থা হল কেন? এর একমাত্র কারণ মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে পড়েছে অনৈক্যের বীজ। তাদের খণ্ড খণ্ড শক্তি নির্জীব হয়ে আছে। প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব মতের পূজায় লিপ্ত। নিজের গোত্র বা দলনেতার কথাই তিল তাবিজ করে গলায় ধারণ করে আছে। ফলে তারা দিন কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থায়। শুধু তাই নয় সব সফলতা পর্যবসিত হচ্ছে ব্যর্থতায়। পারস্পরিক অনৈক্য ও সংঘাত কোনো দিনও ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য সহায়ক হতে পারে না। দলছুট ভেড়াকে যেমন খুব সহজেই নেকড়ে আক্রমণ করতে পারে ঠিক তেমনি মুসলিম উম্মাহ যখন বিভিন্ন দল ও মতে বিভক্ত হয়ে পড়ে তখন বাতিল শক্তিও খুব সহজেই মুসলিমদের উপর জুলুম নির্যাতন করার সুযোগ পেয়ে যায়। আজকে আমাদের গাজাবাসী ভাইবোনদের উপর জালিম ইহুদিরা নির্বিচারে যেই গনহত্যা চালাচ্ছে তার জন্য মুসলিম উম্মাহর বিভেদ অনেকাংশেই দায়ী। আজ যদি পুরো মুসলিম উম্মাহ সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে, তাওহীদের কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর পতাকা তলে একত্রিত হয়ে নির্যাতিত মাজলুম ভাইদের পক্ষে দাঁড়াতো তাহলে আজ আমাদের ভাইদের রক্তে আল্লাহর জমিন রক্তাক্ত হতো না। আল্লাহর জমিনে ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে দেখতে চাইলে উম্মাহের ঐক্যের বিকল্প নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক। আমিন।

অপেক্ষা করুন

0