❝বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম❞
এ বিষয়ে আমি খুব ছোট্ট একটা উদাহরণ দিতে চাই যেটা আমরা সবাই নিজ চোখে হতে দেখেছি সমসাময়িক একটা ঘটনা। আমরা সবাই এর প্রতক্ষদর্শী।
এই যে আমাদের দেশের সরকার পতন হলো এই সরকারের এভাবে পতন আমরা কেউ চিন্তা করেছিলাম? ৫ আগষ্ট সকালেও কি কেউ চিন্তা করেছিলাম এই সরকার এভাবে পালিয়ে যাবে? দীর্ঘ ১৭ বছর শাসন করে গেছে। আর এত সহজে পতন কল্পনা করা যায়?
সামান্য একটা কোঠা আন্দোলন তা নিয়ে সরকার পতন।
এটা কি সত্যিই খুব সহজ কিছু?
আচ্ছা এই আন্দোলন কিভাবে সম্ভব হলো?
উত্তর একটাই হবে আমাদের ঐক্য। সবাই একজোট হয়ে আন্দোলনে নেমেছিলো বলেই না হাসিনার মতো এক সরকার পালাতে বাধ্য হলো। অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এসেছে। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করার জন্য শত্রুপক্ষের মনে ভয়ের সৃষ্টি করেন তার প্রমাণ তো আমরা পূর্ববর্তী ঘটনা থেকে জেনেছি। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিরাহ থেকেও জেনেছি আলহামদুলিল্লাহ।
আচ্ছা এই যে সবাই একজোট হলো সবার কি মনের মিল ছিলো? আন্দোলনে যুক্ত সবাই কি সব বিষয়ে একই রকম মতাদর্শ অনুসরণ করে? এখানে কি আমরা কেউ দেখেছিলাম কে কোন মাজহাব মানে কে কোন মতাদর্শে চলে? নাকি সব কিছুকে একপাশে রেখে একটা বিষয়ে একমত হয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম?
একটা সময় মাত্র কয়েকজন মুসলিম থেকে আজ কোটি কোটি মুসলিম পুরো দুনিয়া জুড়ে।
অথচ নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে সামান্য কিছু সংখ্যক মুসলিম ছিলেন। তবুও তারা ছিলেন সম্মানিত, পদে পদে তারা বিজয় লাভ করেছেন আল্লাহর ইচ্ছায়। কিন্তু এখন আমাদের মুসলিমদের সংখ্যা এত বেশি তবুও আমরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, অবহেলিত। এর কারণ আমাদের কৃত পাপ। যার কারনে আমরা আল্লাহর শাস্তি ঐক্য হীন হয়ে পরেছি।
আচ্ছা একবার চিন্তা করুন আপনার যে রং টা পছন্দ আপনার ঘরের প্রত্যেকের কি সেই একই রং টা পছন্দ? আপনার যে জামাটা পছন্দ সেটা কি আপনার সমাজের সকলের পছন্দ?
উত্তর অবশ্যই আসবে না।
আচ্ছা যদি এই সামান্য বিষয় গুলোতে আমাদের গড়মিল থাকে তাহলে আমরা কিভাবে চিন্তা করি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সবার মতামত একই রকম হবে?
আমার সবার একটা জামা পছন্দ না হলেও সতর ঢাকতে হবে এ ব্যপারে যেমন আমরা একমত। তেমনি খাবারের পছন্দের তালিকাটা এক না হলেও খাবার খেতে হবে এ ব্যপারে আমরা একমত। ঠিক তেমনি ইসলামের ফরজ বিধান গুলো যেমন : ঈমান, স্বলাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত, জিহাদ এসকল ব্যপারে আমরা একমত।
হুম এগুলো আদায়ের ব্যপারে আমাদের মাঝে কিছু ভিন্নতা আছে এটা ঠিকই কিন্তু প্রতিটি ফরজ বিষয়ে আমরা প্রত্যেকে একমত।
দেখুন আমরা সবাই খাই কেউ হাত দিয়ে খায় কেউবা চামিচ দিয়ে। কেউ রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ মেনে বসে খায় কেউবা চেয়ার টেবিলে। কিন্তু সবাই সবার মতো করে এ বিষয় গুলো করে নিচ্ছি ঠিকই।
আমরা সব সময় মনে করি পৃথিবীতে আমি একমাত্র ঠিক বাকি সবাই ভুল। আমিই শুধু রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ মেনে চলছি।
আচ্ছা আমরা কি সব সময় সব কাজ একই ভাবে করি? আমাদের কাজে কি কখনো ভিন্নতা আসে না?
তাহলে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সব সময় তার প্রতিটি কাজ এক ভাবেই করেছেন? তার কাজে কি কখনো ভিন্নতা ছিলো না??
যেগুলো ফরজ বিধান তাতে ভিন্নতা কারোর নেই। আমাদের ভিন্নতা শুধু সুন্নাহ আর নফলে।
এই ভিন্নতা টুকু নিয়ে আমরা একে অপরের থেকে আলাদা হচ্ছি একজন আরেকজনকে কাফের বলছি। সুবহান আল্লাহ।
কত বড় কথা বলছি আমরা কি চিন্তা করেছি??
আসুন সে কথায় যেগুলোতে আমরা একমত। থাকুক না কিছু পার্থক্য ক্ষতি কি? আমরা যে বিষয় গুলোতে একমত সেগুলো একসাথে করি। আমাদের ঐক্য আমাদের মুসলিম উম্মাহর একজোট হওয়া অনেক বেশি জরুরি। আজ সামান্য কিছু ইয়াহুদী সাথে কিছু খ্রিস্টান একজোট হয়ে আমাদের মুসলিম ভাইদের মারছে কিন্তু আমরা চুপ করে আছি আমরা ভাবছি ওটা তাদের নিজেদের ব্যপার। আমরা ভুলে যাচ্ছি ওরা আমাদের ই ভাই। ওদের নিজেদের ব্যপার টাই যে আমাদের ও।
এই সামান্য কিছু ইয়াহুদী নাসারারা যদি একজোট হয়ে বিশ্ব শাসন করতে পারে তাহলে চিন্তা করুন আমরা মুসলিমরা একজোট হলে কি করতে পারবো! সাথে আল্লাহর সাহায্য তো থাকবেই ইনশাআল্লাহ।
এখন যে বিষয়ে বলবো তা হয়তো অনেকের কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে কিন্তু আসলে বিষয় টা আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমাদের ঐক্য এর জন্য।
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এর গুরুত্ব আমরা সবাই জানি আবার গনতন্ত্র একটি কুফরি ব্যবস্থা তাও আমরা জানি।
কিন্তু এ সব কিছু জানার পরেও কেনো আমরা আল্লাহর রাস্তায় খেলাফতের আশায় জিহাদ করছি না?
এই ভাবে চুপ থাকাটা কি কুফরিকে সমর্থন করা নয়??
আচ্ছা কেনো আমরা চুপ করে আছি??
এর কারণ মাত্র একটা সেটা হচ্ছে আমাদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। পাশাপাশি আমাদের আল্লাহর ওপরে সে পরিমাণ তাওয়াক্কুল ও নেই যতটা থাকলে আমরা তার রাস্তায় নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে পারি।
ইয়াহুদীরা আমাদের ওপরে যে নির্যাতন চালাচ্ছে আমাদের মাঝে যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পেরেছে আমাদের ঐক্য নষ্ট করতে পেরেছে তার পিছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে এই গনতন্ত্র।
গনতন্ত্র দিয়ে তারা আমাদের আলাদা জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। এখন আমরা তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বলছি আমরা বাঙ্গালী, তারা পাকিস্তানি, ওরা ফিলিস্তিনি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমরা কখনো কি বলেছি আমরা মুসলিম?
আমার বড্ড বেশি মনে পরে সিরাহ এ পড়া সে দিনটার কথা যখন সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আনসার এবং মুহাজির সাহাবিদের মধ্যে প্রবল ঝগড়া লেগে যায়। তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের লোকদের ডেকে বলেছিলো হে আনসাররা এবং হে মুহাজিররা। এ ডাক শুনে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছিলেন?? আমি তো জাহেলিয়াতের ডাক শুনতে পাচ্ছি!
আফসোস আজ আমরাও যে জাহেলিয়াতে পুরো শরীর ডুবিয়ে বসে আছি তা আমরা টেরও পাচ্ছি না।
সেদিনের মতো আজও কিছু মুনাফেক আছে যারা আমাদের মধ্যে বিষ ঢালার কাজ করে চলেছে আর আমরা তাদের দেওয়া বিষ মধু ভেবে গিলছি।
আমরা অনেকেই মনে করি ইমাম মাহদি আসার আগে খেলাফত কায়েম আর সম্ভব নয়। আমরা অপেক্ষা করছি ইমাম মাহদি আসলে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণের জন্য। কিন্তু আমরা কি নিজেদের প্রস্তুত করেছি তার হাতে বাইয়াত গ্রহণের জন্য??
আমরা কি জিহাদের যাওয়ার সামর্থ্য রাখি?? আমরা কি জিহাদে গিয়ে অন্য একজন যে আমরা থেকে ভিন্ন মতাদর্শের তার সাক্ষাৎ পেয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারবো? নাকি দেখা যাবে উল্টো আমরা নিজেরা নিজেরাই জিহাদে লিপ্ত হয়ে গেছি??
আচ্ছা কেনো আমাদের এত বিভেদ? কেনো আমরা নিজেদের গায়ে কাঁদা ছিটাই?
আমরা যদি ওপরে থুথু ফেলি সেটা কি আমাদের দিকেই ফিরে আসবে না??
চলুন না আমরা একজোট হয়ে যাই। চলুন না সে বিষয় গুলোতে এক হই যাতে আমরা প্রত্যেকে একমত! চলুন না নিজেদেরকে তৈরি করি জিহাদের জন্য! চলুন না একজোট হয়ে রুখে দাঁড়াই গনতন্ত্র নামের এই কুফরি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে!
চলুন না একজোট হয়ে যাই! চলুন না একসাথে মিশে যাই! চলুন না একে অপরকে ভাই হয়ে যাই! একে অপরের সাহায্যকারী হয়ে যাই! চলুন না নষ্ট করে দেই ইয়াহুদী ও নাসারাদের ঘৃণ্য চক্রান্ত। পিছনে ফেলে মৃত্যু ভয়!
মুমিনের কিসের ভয়? সে তো আল্লাহর রাস্তায় মরলে শহীদ আর বেঁচে থাকলে গাজী। এমন একজনের কি কোনো কিছুতে ভয় থাকতে পারে??