উম্মতের ঐক্য ০৩

“কুরআনের একই পঠনরীতিতে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করা ওসমান রা:-এর বড় অবদান

তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান রা:-এর যুগে বেশকিছু যুগান্তকারী কাজ হয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, পবিত্র কুরআনের একই পঠনরীতিতে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করা। প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রা: কর্তৃক কুরআন সুবিন্যস্ত ও একই মলাটে নিয়ে আসার পরও হজরত ওসমানকে যে বিষয়টি পুনরায় কুরআন সংকলনে বাধ্য করেছে তা হল, আবু বকর রা:-এর সংকলিত কুরআনের পাশাপাশি সেসময়ে আরও কয়েকজন সাহাবি ‘কিরাতে সাবআ’ তথা কুরআন তিলাওয়াতের সাত পঠনরীতির অনুকরণে একাধিক প্রতিলিপি তৈরি করেন। পরে দেখা যায়, বিভিন্ন শহরে কুরআন তিলাওয়াতের ‘কোন্ পাঠরীতি’ সঠিক-এ নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়-এমনকি বিরোধী পক্ষকে কাফের পর্যন্ত আখ্যায়িত করা হলে হজরত ওসমান রা: আশু ফেতনা ও বিশৃঙ্খলা রোধেই মূলত ফের কুরআন সংকলনের অভাব অনুভব করেন। সে লক্ষ্যেই তিনি অভিন্ন পঠনরীতিতে কুরআন লিপিবদ্ধ করেন এবং ওই প্রতিলিপিগুলো বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে দেন। কেননা, মহাগ্রন্থ আল কুরআন নিছক কোন পঠিত কিতাব নয়; বরং এটি ইসলামি শরিয়তের সংবিধান। ইবাদত, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত, সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং আখলাক-চরিত্র-প্রতিটি বিষয়ের সঠিক নির্দেশনা কুরআনে বিদ্যমান। সুতরাং এটির পঠনরীতিতেই যদি মতানৈক্য তৈরি হয় তাহলে কুরআন নাজিলের প্রধান উদ্দেশ্য সমূহ আড়াল হয়ে যাবে।

হজরত আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত, হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রা: ইরাকিদের সঙ্গে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান বিজয়ের লক্ষ্যে শামের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে সেখানকার অধিবাসীদের কুরআন পঠনরীতির ভিন্নতা তাকে আতঙ্কিত করে তোলে। তিনি হজরত ওসমান রা:-এর নিকট আগমন করে বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন! এই উম্মত ইহুদি-খ্রিস্টানদের বিরোধীতার আগে কুরআন পঠন-পদ্ধতি নিয়ে বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেছে। তখন হজরত ওসমান রা: হাফসা রা:-নিকট খবর পাঠালেন যে আপনি আমাদের পবিত্র কুরআনের সেই প্রতিলিপি দেন যা আমরা লিপিবদ্ধ করব। কাজ শেষে তা আবার আপনাকে ফিরিয়ে দেব। হজরত হাফসা রা: ওসমান রা:-এর কাছে একটি প্রতিলিপি পাঠালেন। তখন ওসমান রা: জায়েদ ইবনে সাবেদ, আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের, সাঈদ ইবনুল আস, আব্দুর রহমান বিন হারেস বিন হিসাম রা: প্রমুখ সাহাবাকে ওই প্রতিলিপিটির একাধিক কপি প্রস্তুত করার আদেশ করলেন।

হজরত ওসমান রা: উপরোক্ত তিন কুরাইশ সাহাবিকে বললেন, যদি তোমাদের মধ্যে এবং জায়েদ ইবনে সাবেতের মধ্যে কুরআনের কোথাও মতানৈক্য সৃষ্টি হয় তাহলে কুরাইশদের উচ্চারণটাই লিখো। কেননা, কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে তারা তাই করলেন। যখন কুরআনের একাধিক প্রতিলিপি প্রস্তুত শেষ হল তখন হাফসা রা:-প্রেরিত নুসখাটি ফেরত দেওয়া হল এবং নতুন প্রস্তুতকৃত কপিগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হল পৃথিবীর দিগ-দিগন্তে। আর অন্যান্য কিরাত তথা পঠনরীতির প্রতিলিপিগুলো আগুনে ভষ্ম করা হল।”

অপেক্ষা করুন

0