আমার এক পরিচিত মানুষ বিয়ের পূর্বে স্ত্রীকে বলে নিতে চায় যে, “আপনার যদি কোনো অতীত থাকে তাহলে আমাকে বলতে পারেন এখন সর্বোচ্চ মেনে নেয়ার চেষ্টা করবো, কিন্তু বিয়ের পর যদি কোনো অতীত সামনে আসে তাহলে আমি তখন অবস্থা অনুযায়ী যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি।।”
প্রশ্ন ১.. এই শর্ত দিয়ে বিয়ে করা তার জন্য কি জায়েজ হবে?
প্রশ্ন ২.. যদি জায়েজ হয় তবে পরর্বতীতে বাস্তবিক অর্থেই কিছু প্রকাশ পেলে তখন কি তার বিয়ে বহাল থাকবে নাকি এমনিতেই তালাক হয়ে যাবে! (আর যদি যেকোনো সিদ্ধান্ত এর জায়গায় তালাক দিবো উল্লেখ করে সেক্ষেত্রে কি হবে)
প্রশ্ন ৩.. অতীতের জীবনের বিষয় সরাসরি জিজ্ঞেস এর পরও মেয়ের জন্য অতীতকে গোপন করে বিয়ে করা কি জায়েজ হবে? যদিও আলেমরা কিয়ামতের দিনে সাক্ষী হয়ে যাবে এই জন্য অনেক সময় গুনাহ প্রকাশ করতে নিষেধ করে।।
————-উত্তর————-
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
মিথ্যা কথা বলা শরীয়ত অনুমোদিত নয়।
নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলা হারাম।
শরিয়তে সত্যকে সর্বত্রই উৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস আনে।
পবিত্র কুরআন শরিফে এসেছে
لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ [٣:٦١
তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। {সূর আলেইমরান-৬১}
হাদিস শরিফে এসেছে,
সাফওয়ান ইবন সুলাইম বলেন,
قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ : أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ جَبَانًا ؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ بَخِيلًا؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ كَذَّابًا ؟ فَقَالَ: ( لَا )
রসুলুল্লাহ ﷺ -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কাপুরুষ হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, না। (মুয়াত্তা মালিক ২/৯৯০) অর্থাৎ মুমিনের বিভিন্ন চারিত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে, তবু সে মিথ্যা বলতে পারে না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا»
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমানগণ তার শর্তের উপর থাকবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৯০, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪০৩৯}
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
এই শর্ত দিয়ে বিয়ে করা তার জন্য জায়েজ হবে।
(০২)
তিনি বলেছেন যে “বিয়ের পর যদি কোনো অতীত সামনে আসে তাহলে আমি তখন অবস্থা অনুযায়ী যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি”
এক্ষেত্রে তিনি তো এই মুহূর্তে তাকে কোনো শর্তযুক্ত তালাক দেয়নি,তাই পরর্বতীতে বাস্তবিক অর্থেই কিছু প্রকাশ পেলে তখনও তার বিয়ে বহাল থাকবে।
এমনিতেই তালাক হয়ে যাবেনা।
(০৩)