আসসালাম আলাইকুম,
আমার স্বামী পরকিয়ায় লিপ্ত।এইবার নিয়ে পঞ্চম বার তিনি এই পাপ এ জড়ালেন। আমার ২ মেয়ে। একজন এইবার এসএসসি দিয়েছে।আর একজন আগামী বছর এস এস সি দিবে । এইবার আমি তাকে নিষেধ করার সময় অনেক রাগারাগি করেছি।তবে আমি অনুতপ্ত।তার সাথে এইরকম ব্যবহার করা উচিত হয় নি।তবে আমি এবার আর ধৈর্য ধরতে পারি নি।এখন মেয়েরা বড় হয়েছে তার পরেও তার কোনো অনুতপ্ততা নেই।তিনি অনবরত অস্বীকার করেই যাচ্ছেন যে তিনি এমন করেন নি । অথচ তার এই অপকর্ম তার ২ মেয়ে এবং তার মা ই প্রথম বুঝতে পেরেছে।তিনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না। আমি কোনো কথা বললে তিনি শোনেন না। আমি তাকে তালাক দিতে চাই না । কিন্তু আমি তার সামনে আর যেতে চাই না।আমি ঘরেই তার সামনে খাস পর্দার মতো করে নিজেকে আবৃত করে রাখতে চাই।
প্রশ্ন ১- যেহেতু আমার স্বামী এইবার নিয়ে পঞ্চম বার পরকিয়ায় লিপ্ত হয়েছেন ।তিনি কি আমার জন্য হারাম হয়ে গেছেন? আর আমি কি তার সামনে খাস পর্দার মতো করে নিজেকে আবৃত করে রাখতে পারব?এতে কি তার হক নষ্ট হবে?
আর যেহেতু মেয়েরা বড় হয়েছে। আমি চাই না তারা তার বাবার থেকে কোনো প্রকার ভরন পোষন নিক। কারণ হয়তো তিনি এমনিতেও হয়তো কিছুদিন পর ভরন পোষন বন্ধ করে দিবেন। কারণে অকারণে তিনি সন্তানদের বলেন “আমি তোমাদের বাবা নই। তোমাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে বাবা বলে ডাকবে না। ভরন পোষন বন্ধ করলে দেখব তোমাদের মা কীভাবে তোমাদের লালন পালন করে।” আমার কাছে কিছু টাকা আছে ।আমি আমার ২ মেয়েদের জন্য ঐ টাকাটা ইসলামী ব্যাংক এ বিনা সুদের ভিত্তিতে রাখতে চাই।
প্রশ্ন ২ -এখন আমি কি টাকা গুলো ব্যাংকে রাখতে পারব?. আর আমি আমার মেয়েদের নিয়ে সিদ্ধান্ত হিনতায় ভুগছি।আমি মেয়েদের নিয়ে কী করব আপনার কাছে পরামর্শ চাচ্ছি।
এছাড়াও তিনি সুদ খান । আমি বারবার নিষেধ করার পরেও তিনি সুদ খাওয়া বন্ধ করেন না।
প্রশ্ন নং ৩- আমি তার হিদায়াতের জন্য কীভাবে দোয়া করতে পারি?
————-উত্তর————-
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
হাদীস শরীফে এসেছে
أن عبد الله بن عمر يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول ( كلكم راع وكلكم مسؤول عن رعيته الإمام راع ومسؤول عن رعيته والرجل راع في أهله وهو مسؤول عن رعيته والمرأة راعية في بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها والخادم راع في مال سيده ومسؤول عن رعيته
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন-প্রতিটি ব্যক্তিই দায়িত্বশীল। প্রতিটি ব্যক্তিই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমামগণ দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষগণ তাদের পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। মহিলাগণ স্বীয় স্বামীর গৃহের দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। দাস-দাসীগণ দায়িত্বশীল তার মনিবের সম্পদের ব্যাপারে, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৮৫৩
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৮২৮
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৪৮৯
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৯৩০
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৪৯৫
মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৫৩৭৭
মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২৯৫১
মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৭৪৫
মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১০৩)
★সু–প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি ও আপনার মেয়েরা সকলে মিলে যথাযথ ভাবে তাকে বুঝাবেন,পরকালের শাস্তির ব্যাপারে বুঝাবেন,নিজের পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে তাকে বুঝাবেন।
প্রয়োজনে তার পরিবারের মুরব্বি/এলাকার মুরব্বিদের মাধ্যমেও তাকে বুঝাতে পারেন।
সকলে মিলে তাকে অবশ্যই এই পরকিয়া থেকে হটানোর যথাযথ চেষ্টা করবেন।
পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
গায়রে মাহরাম মেয়েদের সাথে কথা বলা,যোগাযোগ করার যাবতীয় রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
আপনার জন্য আরো করনীয় সম্পর্কে জানুনঃ-
★সু–প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার স্বামী আপনার জন্য হারাম হয়ে যায়নি।
তিনি এখনো শরীয়ত সম্মতভাবে আপনার স্বামী হিসেবেই রয়েছে।
সুতরাং আপনি তার সামনে খাস পর্দার মতো করে নিজেকে আবৃত করে রাখতে পারবেননা, এতে তার হক নষ্ট হবে।
(০২)
হ্যাঁ টাকা গুলো ইসলামী ব্যাংকে রাখতে পারবেন। তবে কোনো সুদ নেয়া যাবেনা।
(০৩)
নিম্নের দোয়াগুলি মহান আল্লাহর কাছে করবেনঃ-
اللَّهُمَّ اهْدِ زَوْجِي، وَأَصْلِحْ قَلْبَهُ، وَاجْعَلْهُ مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ
হে আল্লাহ! আমার স্বামীকে হেদায়েত দিন, তার অন্তরকে শুদ্ধ করুন এবং তাঁকে আপনার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
اللَّهُمَّ اجعل زوجي قرةَ عينٍ لي في الدنيا والآخرة، واهده إليك هُدىً لا يضل بعده أبدًا
হে আল্লাহ! আমার স্বামীকে দুনিয়া ও আখিরাতে আমার চোখের শীতলতা বানিয়ে দিন এবং তাকে এমন হেদায়েত দিন, যার পর আর কখনো সে পথভ্রষ্ট না হয়।
اللَّهُمَّ رُدَّ زَوْجِي إِلَى دِينِكَ رَدًّا جَمِيلًا، وَافْتَحْ قَلْبَهُ لِحُبِّكَ وَحُبِّ طَاعَتِكَ
হে আল্লাহ! আমার স্বামীকে সুন্দরভাবে আপনার দ্বীনের পথে ফিরিয়ে দিন এবং তার অন্তরকে আপনার ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রতি উন্মুক্ত করে দিন।
এই দোয়াগুলো আপনি নামাজের সেজদায়, তাহাজ্জুদের সময়, বা ফরজ নামাজের পর হাত তুলে করতে পারেন।
সবসময় নম্র, ভালোবাসাপূর্ণ মনোভাব রাখুন, যেন দোয়া আসলেই আন্তরিক হয়।
নিজের আচরণ ও আচরণেও হেদায়েতের আলো ছড়ান,কারণ আপনি তার সবচেয়ে কাছের মানুষ।
দোয়া কবুলের জন্য আরো করনীয় জানুনঃ-