Answered: কেউ হাসির ছলে অভিশাপ দিলে কি হয়? যদি হয় তাহলে তা কাটিয়ে উঠার উপায় কি?

আসসালামু’আলাইকুম, 

একবার আমি আর আমা কয়েকজন ছোট ভাই মিলে বোরহানী খাচ্ছিলাম। আমরা সবাই ই খেয়েছিলাম। বাকি অংশ অন্য ছোট ভাই কে দেওয়ার সময় আমি দুষ্টুমির ছলে বলে যে, অমুক পুরাটা খেয়ে ফেলেছে। অমুক ছেলেটা বলে, ভাই আপনি মিথ্যা বলেন কেন! সে দুষ্টামি করে বলে ভাই অভিশাপ দিব কিন্তু পরে বলে ভাই আপনার কিন্তু চাকুরী হবে নাহ। আমি তখন ভাবি যে, আমার তো চাকুরী কয়েকদিন আগে কনফার্ম হলো আর সে তো ফাইজলামী করলো ইন শা আল্লাহ এতে কিছু হবে না। পরে ওই চাকুরী কনফার্ম হওয়ার পরও ওই কোম্পানি কোনো কারনে আমাকে নেই নি, কনফার্ম হওয়ার পর কয়েকজন বাদ পড়ে তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। এটা ২০২২ এর ঘটনা এখনো আমার চাকুরী হয় নি। এখন আবার একটা চাকুরী কনফার্ম করলো দীর্ঘ এক মাস তারা জয়েনিং এর ডেইট না দেয়ায় আমার মাথায় আবার সেই চিন্তা আসা শুরু করছে। 

১। এখন আমার কি করা উচিৎ? আমি আমার ওই কাজ টার জন্য তার কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছি। আবার কি বুঝিয়ে তার কাছে মাফ চেয়ে নিব?

২। মিথ্যা অভিযোগ ও দুষ্টামির ছলে অভিশাপ নিয়ে আল্লাহ কি বলেছেন এবং রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন? একটু জানাবেন।

জাযাকাল্লাহ খাইরান।

————-উত্তর————-

জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
অভিশাপ দেওয়া সংক্রান্ত হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أنَّ رَجُلًا اِسْمُه عَبْدُ اللّٰهِ يُلَقَّبُ حِمَارًا كَانَ يُضْحِكُ النَّبِىَّ ﷺ وَكَانَ النَّبِىُّ ﷺ قَدْ جَلَدَه فِى الشَّرَابِ فَأُتِىَ بِهِ يَوْمًا فَأَمَرَ بِه فَجُلِدَ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ : اَللّٰهُمَّ الْعَنْهُ مَا أَكْثَرَ مَا يُؤْتٰى بِه فَقَالَ النَّبِىُّ ﷺ : «لَا تَلْعَنُوْهُ فَوَ اللهِ مَا عَلِمْتُ أَنَّه يُحِبُّ اللّٰهَ وَرَسُوْلَه». رَوَاهُ البُخَارِىُّ
‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তির নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ, কিন্তু তাকে ‘হিমার’ (গাধা) উপাধিতে ডাকা হতো। সে (অবোধের ন্যায় কথাবার্তা বলে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাসাতো। একদিন মদ্যপায়ীর জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর দণ্ড প্রয়োগ করেছিলেন। এরপর আবার একদিন তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে চাবুক মারার নির্দেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহ! তার ওপর তোমার অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। কতবারই না তাকে এ অপরাধে আনা হলো? এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে অভিশাপ দিও না। আল্লাহর শপথ! আমি তার সম্পর্কে জানি যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসে।
 (সহীহ : বুখারী ৬৭৮০,মিশকাত ৩৬২৫)
,
নির্দিষ্ট ভাবে কোনো মুসলিম ব্যক্তির উপর অভিশাপ দেওয়া জায়েজ নেই।
 কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
سَالِمٌ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوْعِ فِي الرَّكْعَةِ الْآخِرَةِ مِنَ الْفَجْرِ يَقُوْلُ : اللهُمَّ الْعَنْ فُلَانًا وَفُلَانًا وَفُلَانًا بَعْدَ مَا يَقُوْلُ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ فَأَنْزَلَ اللهُ {لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ} إِلَى قَوْلِهِ {فَإِنَّهُمْ ظَالِمُوْنَ} رَوَاهُ إِسْحَاقُ بْنُ رَاشِدٍ عَنْ الزُّهْرِيِّ.
সালিম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছেন যে, তিনি ফজরের সলাতের শেষ রাকআতে রুকু থেকে মাথা তুলে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্ (আল্লাহ তাঁর প্রশংসাকারীর প্রশংসা শোনেন। হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা)’, ‘রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ’ বলার পর এটা বলতেনঃ হে আল্লাহ! অমুক, অমুক এবং অমুককে লানত করুন। তখন আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَيْءٌ ….. فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ “তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদের শাস্তি দিবেন, এ বিষয়ে তোমার করণীয় কিছুই নেই। কারণ তারা জালিম।”(সূরা আলু ‘ইমরান ৩/১২৮)
[সহিহ বুখারী, অধ্যায়: তাফসীর, অনুচ্ছেদ: আল্লাহর বাণীঃ এই বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই।]
এ হাদিস থেকে জানা গেল, আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্টভাবে কোন কাফিরকেও অভিশাপ দেয়ার অনুমতি দেন নি।
এ মর্মে আরেকটা হাদিস:
উমর ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তির নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ, কিন্তু তাকে ‘হিমার’ (গাধা) উপাধিতে ডাকা হতো। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাসাতো। একদিন মদপানের অপরাধের জন্য নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর দণ্ড প্রয়োগ করেছিলেন। এরপর আবার একদিন তাকে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলে তিনি তাকে চাবুক মারার নির্দেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহ, এই লোকের উপর তোমার অভিসম্পাত হোক। কতবারই না তাকে এ অপরাধে আনা হল!
তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«لَا تَلْعَنُوْهُ فَوَ اللهِ مَا عَلِمْتُ أَنَّه يُحِبُّ اللّٰهَ وَرَسُوْلَه»
“তাকে অভিশাপ দিও না। আল্লাহর শপথ! আমি তার সম্পর্কে জানি যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসে।” (বুখারী)
এ হাদিসে দেখা গেলো ,প্রিয় নবি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দিষ্টভাবে একজন পাপী ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়ার অনুমতি দেন নি।
,
তবে মাজলুম জালেমের প্রতি বদ দুয়া করতে পারবে,অভিশাপ দিতে পারবে।
,
বিস্তারিত জানুনঃ  
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
কাউকে অভিশাপ দিলে তার গুনাহ মাফের দোয়া চাইবে,অভিশাপের বিপরিত তার জন্য ভালো কিছু আল্লাহর কাছে চাইবে,এবং তওবা ইস্তেগফার পাঠ করবে।
ইনশাআল্লাহ ক্ষতি হবেনা।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি তার কাছে গিয়ে বলবেন যে তিনি যেনো আপনার  গুনাহ মাফের দোয়া চান,অভিশাপের বিপরিত আপনার জন্য ভালো কিছু আল্লাহর কাছে চান,এবং তওবা ইস্তেগফার পাঠ করেন।
ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা হবেনা।
(০২)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ تُدَاعِبُنَا. قَالَ: «إِنِّي لَا أَقُولُ إِلَّا حَقًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
আবূ হুরায়রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদের সাথে কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তা বলছেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, (এ কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তার মধ্যেও) আমি সত্য কথাই বলছি।
(তিরমিযী ১৯৯০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৭২৬, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২০০, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৬১৬৮, আহমাদ ৮৭২৩, শু‘আবুল ঈমান ৫২৩৮, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২১৭।)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
উক্ত ব্যক্তি যেহেতু সেই অভিশাপ অনেকটা ঠাট্রার ছলে বলেছেন, সুতরাং আশা করি সেই অভিশাপ আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না।
তদুপরি এটা তিনি মন থেকে বললে বিষয়টি কবুল হতেও পারে,তাই এক নাম্বার প্রশ্নের জবাবে দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

অপেক্ষা করুন

0