আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,
আমাদের সমাজে আজ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কেউ ইসলামি অনুশাসন মেনে চললে — যেমন: নিয়মিত নামাজ, রোজা, সুন্নাহ পোশাক, বা জিহাদ, খিলাফাহ ইত্যাদি ইসলামী মূল ধারণা নিয়ে কথা বললে — তাকেই অনেক সময় ‘জঙ্গি’, ‘উগ্র’ বা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ হিসেবে অপবাদ দেয়া হয়। আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই মুজাহিদদের ‘জঙ্গি’ বলে গালি দেয় এবং যারা সত্য বা দাওয়াত দিতে চায়, তাদের ‘উগ্র’ হিসেবে অপবাদ দেয়া হয়। এদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া অধিকাংশ আত্মীয়ই কঠোর সেক্যুলার চিন্তায় বিশ্বাস করে, এবং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে আমার নিজের ঈমান, মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তা সবই ক্ষতির মুখে পড়ে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও, যারা ইসলামের পূর্ণতা নিয়ে কথা বলে, তাদের অনেক সময় ‘রাজাকার’, ‘জঙ্গি’, ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে চিহ্নিত করা হয়, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নির্যাতনেরও শিকার করা হয় — গুম, ক্রসফায়ারের ভয়ও থাকে। কখনো দাওয়াত দিলে আইনগত হয়রানির শিকার হতে হয়; আর দাওয়াত না দিলে মনে হয় আমরা নিজেরাই মুনাফিকের পর্যায়ে থেকে যাচ্ছি।
এই প্রেক্ষাপটে আমার প্রশ্ন দুটি:
❓১. আত্মীয়স্বজনরা যদি ইসলাম ও মুজাহিদদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, ইসলামী চিন্তাকে “জঙ্গিবাদ” মনে করে — তবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কি এখনো ফরজ থাকে? নাকি আত্মরক্ষার জন্য দূরত্ব বজায় রাখাই উত্তম?
❓২. মুসলিম নামধারী শাসক বা নিরাপত্তা বাহিনী — যারা ইসলামী মূল্যবোধ বা সত্যিকারের দাওয়াতকে দমন করে, নির্যাতন চালায় — তাদের প্রতি একজন সাধারণ মুসলিমের দায়িত্ব কী হওয়া উচিত?
অন্যায় দেখেও চুপ থাকা কি বৈধ? আর দাওয়াত দিলে যদি জুলুম হয়, তাহলে সে ভারসাম্য কীভাবে বজায় রাখতে হবে?
————-উত্তর————-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
আবূ হারূন আল-আবদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
عَنْ أَبِي هَارُونَ الْعَبْدِيِّ، قَالَ كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ قَالَ مَرْحَبًا بِوَصِيَّةِ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ . إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ لَنَا ” إِنَّ النَّاسَ لَكُمْ تَبَعٌ وَإِنَّهُمْ سَيَأْتُونَكُمْ مِنْ أَقْطَارِ الأَرْضِ يَتَفَقَّهُونَ فِي الدِّينِ فَإِذَا جَاءُوكُمْ فَاسْتَوْصُوا بِهِمْ خَيْرًا “
তিনি বলেন, আমরা আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) -এর কাছে এলেই তিনি বলতেনঃ তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওসিয়ত অনুযায়ী স্বাগতম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলতেনঃ লোকেরা অবশ্যই তোমাদের অনুগামী। অচিরেই পৃথিবীর দিকদিগন্ত থেকে লোকেরা তোমাদের নিকট দ্বীনি ইলম অর্জনের জন্য আসবে। তারা যখন তোমাদের নিকট আসবে,তখন তোমরা তাদেরকে ভালো ও উত্তম উপদেশ দিবে।(সুনানু তিরমিযি-২৪৯,তিরমিযী ২৬৫০-৫১, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৪৭।)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
অতীব জরুরী ও সাধারণ মাস’আলা মাসাঈল আয়ত্বে না থাকার কারণে দৈনন্দিন জীবনে দ্বীন-ইসলাম পালন করতে, যে সমস্ত দ্বীনি ভাই-বোন থমকে দাড়ান,এবং যাদের দ্বীনি ইলম অর্জনের কাছাকাছি কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যম নেই, মূলত তাদেরকে দিকনির্দেশনা দিতেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস …..
মুহতারাম/মুহতারামাহ!
দ্বীনের পরিধি অনেক ব্যাপক, সকল বিষয়ে আলোচনা করা বা দিকনির্দেশনা দেওয়া স্বল্প পরিসরের এই ভার্চুয়ালি মাধ্যম দ্বারা আমাদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। চেষ্টা করলেও প্রশ্নকারীর পিপাসা মিটানো সম্ভব হবে না। প্রত্যেক বিষয়ে আমরা শুধুমাত্র সামান্য আলোকপাত করে থাকি।
উপরোক্ত প্রশ্নটির উত্তরের জন্য আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট উলামায় কেরামের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা আপনার জন্য কল্যাণকর হবে বলেই আমাদের ধারণা।
তাছাড়া ইলম অর্জনের জন্য সফর করা অত্যান্ত জরুরী। এবং কষ্ট করে ইলম অর্জন করাই আমাদের আকাবির আসলাফদের রীতি ও নীতি। এদিকেই কুরআনের এই আয়াত ইঙ্গিত দিচ্ছে,
ۚفَلَوْلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَائِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্ব-জাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে।(সূরা তাওবাহ-১২২)
সুতরাং আপনাকে বলবো, আপনি উক্ত প্রশ্নগুলোর জবাব জানতে স্ব-শরীরে কোনো দারুল ইফতায় যোগাযোগ করবেন।
প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।আল্লাহ তা’আলা আপনার ইলম অর্জনের স্পৃহাকে আরো বাড়িয়ে দিক, আমীন।
প্রত্যেকটা বিষয়ের সাথে নিম্নের হাদীসকে লক্ষ্য রাখবেন।
হাসান ইবনে আলী রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে।
ﻭﻋﻦ ﺍﻟﺤَﺴَﻦِ ﺑﻦ ﻋَﻠﻲٍّ ﺭﺿﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﻔِﻈْﺖُ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﷺ : « ﺩَﻉْ ﻣَﺎ ﻳَﺮِﻳﺒُﻚَ ﺇِﻟﻰ ﻣَﺎ ﻻ ﻳﺮِﻳﺒُﻚ » ﺭﻭﺍﻩُ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ ﺻﺤﻴﺢٌ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি।তিনি বলেন,সন্দেহ যুক্ত জিনিষকে পরিহার করে সন্দেহমুক্ত জিনিষকে গ্রহণ করো।(সুনানু তিরমিযি-২৪৪২)