আসসালামু-আলাইকুম,
আমরা ৩ ভাই, ২ বোন, মা-বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। সম্পদ এর বন্টন এখনো করা হয় নি নিজেদের মধ্যে।
যেই বাসায় আমরা থাকতাম এবং এখন শুধু ভাইয়েরা থাকি, এখনো সরকার এর পক্ষ থেকে বরাদ্দ নেওয়া হয় নি। আমাদের মা এর নামে ঐটা লিস্টেড আছে, সরকার থেকে।
শুধু মূল্য পরিশোধ বাবদ ডকুমেন্টস নিতে হবে। এই কাজটা বাকি আছে।
এই বাসায় আমরা ৩ ভাই থাকি। বোনদের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে, মা-বাবা মারা যাওয়ার আগে। তারা হাসব্যান্ড সহ একজন দেশে, একজন বিদেশে থাকে।
বোনরা যেহেতু আলাদা জায়গায় আছে, হাসব্যান্ড, ফ্যামিলি নিয়ে, তাই এই বাসায় যেই জায়গা আছে, ঐটাকে মোটামোটি ৩ ভাগ করে আমরা ৩ ভাই পরিবার-সহ আছি বর্তমানে।
বাসার সাথেই ৪ টি দোকান-ঘর আছে। ঐগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে অনেক আগে থেকে। সর্বশেষ মা মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত দোকানভাড়া মা এর কাছেই দেওয়া হতো, উনি সংসার এর প্রয়োজন অনুযায়ী সেখান থেকে খরচ করতেন।
১) যেহেতু বর্তমানে মা-বাবা কেউই জীবিত নেই, এই দোকান-ভাড়া আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে কিভাবে বন্টন করতে হবে ?
২ ) দোকানগুলোর কোনো মেরামত এর দরকার হলে দোকানভাড়া থেকেই যে খরচ করা হবে, ঐখানেও বন্টন কিভাবে হবে ? ভাই ও বোনদের মধ্যে সমান অংশ কাটা হবে, নাকি মেরামত খরচ বাদ দিয়ে বাকি অংশ ভাইবোনদের মধ্যে বন্টন হবে ? নাকি, যেই মেরামত-খরচ, ঐটাও ভাইবোনদের মধ্যেই যেইভাবে বন্টন এর নিয়ম, ঐ অনুযায়ী কর্তন করতে হবে ?
৩) হঠাৎ করে বোনরা দাবি করছে, এই বাসায় আমরা ৩ ভাই আছি, তাহলে ওদের অংশ কোথায় এই বাসায় ? ওরা-ও তো ভাগিদার।
যেহেতু এখনো এই বাসা ফাইনালি বুঝিয়ে পাওয়া হয় নি সরকার এর কাছ থেকে, আমরা বৈধ দখলদার হিসেবে বসবাস করছি মাত্র, বোনদের এই দাবির ব্যাপারে হুকুম কি হবে ?
৪) এই ঘর-এর মেরামত বাবদ যা খরচ লাগে, তা দোকানভাড়া থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে করা হয়, যেহেতু ঘর এর দোকান, ঘর এর মেরামত ঐ ফান্ড থেকেই করা হচ্ছে। এই খরচ এর ব্যাপারেও বোনদের জিজ্ঞাসা আছে। এইটার সমাধান কি হবে ? বোনদের কথা, যেহেতু এই ঘরে তারা থাকে না, দোকানভাড়া থেকে এই খরচ ঘর এর জন্য কেন করা হবে ? এর সুন্দর সমাধান কি হবে ?
৫) বাড়িতে আমাদের কিছু সম্পত্তি আছে, এইগুলো আমরা জানতাম না। হঠাৎ খোঁজ করতে গিয়ে এইগুলোর ব্যাপারে জানা যায়। সম্পত্তিগুলো বেদখল অবস্থায় আছে। প্রয়োজনীয় দৌড়-ঝাঁপ, মামলা মোকাদ্দমা করে এইগুলো উদ্ধার করতে হবে। এই যে এর পিছনে খরচ হচ্ছে এবং আরো হবে, এই খরচ এর বন্টন ভাই-বোন কিভাবে বহন করবে ? ধরুন, ২০ শতক জমির উদ্ধারে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেলো। এখন, এই খরচের মধ্যে ভাই-বোনদের হিস্যা কেমন হবে ?
৬) আর, ফাইনালি জমিগুলো আল্লাহুর হুকুমে ও রহমতে আমাদের আয়ত্তে চলে আসলে ঐ ক্ষেত্রে জমির বন্টন ভাইবোনদের মধ্যে কিভাবে হবে ? ভাই ৩ জন কত অংশ ও প্রত্যেক বোন কত অংশ পাবে ?
আমরা নিজেদের মধ্যে কোনো ঝামেলা চাই না। সুন্দরভাবে সবাই যেন যার যার হক বুঝে পায়, এই কারণে প্রশ্নগুলো করে সহজ সমাধান জানতে চাচ্ছি। সবার পক্ষ থেকেই আপনাদের কাছে প্রশ্নগুলো করলাম। আশা করি, বিস্তারিত বুঝিয়ে সুন্দর সমাধান দিবেন, যেন ভাইবোন সকলেই সমাধানগুলো বুঝে।
জাযাকুমুল্লাহু খায়রান। (sms)
————-উত্তর————-
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ فَإِن كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۖ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ ۚ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ ۚ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا ۚ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু?জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু’ এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ।
وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّهُنَّ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۚ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ ۚ فَإِن كَانُوا أَكْثَرَ مِن ذَٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَاءُ فِي الثُّلُثِ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَىٰ بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ ۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ
আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। ( সূরা নিসা-১১-১২)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
শরীয়তের বিধান অনুসারে আপনার বাবা ও মার রেখে যাওয়া সমূদয় সম্পত্তি এভাবে বন্টন হবেঃ-
মোট সম্পত্তি ৮ ভাগ হবে।
দুই বোন ১ অংশ করে দুই জন মোট ২ অংশ পাবে।
আপনারা তিনভাই প্রত্যেকে ২ অংশ করে তিন জন মোট ৬ অংশ পাবেন।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
এক্ষেত্রে দোকান ভাড়া নয়,বরং সরাসরি দোকান আগে শরীয়তের আইন অনুসারে সকল ভাই-বোনদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে। এরপর প্রত্যেকে তার বন্টিত অংশ হতে যতটুকু ভাড়া সে সেটা গ্রহণ করবে।
(০২)
আগে দোকানগুলো শরীয়তের আইন অনুসারে সকল ভাই-বোনদের মাঝে বন্টন করতে হবে।
তারপর প্রত্যেকে তার বন্টিত অংশকে সে মেরামত করবে না বিক্রি করে দিবে না ওইভাবে রেখে দিবে,সেটি তার নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যাপার।
বাকিদের এ ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
(০৩)
সরকারের কাছ থেকে দ্রুত কাগজপত্র ঠিক করে নেয়া দরকার। এরপর শরীয়তের আইন অনুসারে সকল ভাইবোনদের মাঝে সেই বাড়ি বন্টন করে দেওয়া জরুরী।
(০৪)
আগে সেই বাড়ির কাগজপত্র ঠিক করে শরীয়তের আইন অনুসারে সকল ভাই-বোনদের মাঝে বন্টন করতে হবে।
তারপর প্রত্যেকে তার বন্টিত অংশকে সে মেরামত করবে না বিক্রি করে দিবে না ওইভাবে রেখে দিবে,সেটি তার নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যাপার।
বাকিদের এ ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
(০৫)
প্রত্যেকে তার অংশ অনুপাতে খরচ দিবে।
২০ শতক জমির উদ্ধারে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে বোনেরা ৩৭৫০০ টাকা করে দিবে।
আর ভাইয়েরা ৭৫ হাজার টাকা করে দিবে।
(০৬)
শরীয়তের বিধান অনুসারে আপনার বাবা ও মার রেখে যাওয়া বড়ি,দোকান,জমি সহ সমূদয় সম্পত্তি এভাবে বন্টন হবেঃ-
মোট সম্পত্তি ৮ ভাগ হবে।
দুই বোন ১ অংশ করে দুই জন মোট ২ অংশ পাবে।
আপনারা তিনভাই প্রত্যেকে ২ অংশ করে তিন জন মোট ৬ অংশ পাবেন।