উম্মতের ঐক্য-১৫

অনেক বছর আগের ঘটনা। আব্বা একদিন শখ করে আম্মাকে আটটা মুরগী লালন-পালন করার জন্য এনে দিলেন। আমাদের বাসার সামনে কিছু অংশে বাগান ছিল। ওরা এই ছোট এরিয়াতে ঘুরাফেরা করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ না করায়; প্রতিদিন দল বেঁধে বাহিরে যেতো এবং অক্ষত ভাবে সবাই ফিরেও আসতো। কিছুদিন পর আম্মা দেখলেন দু-তিনটে মুরগী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই তিনটে মুরগী আম্মা জবেহ করলেন।
মুরগীর দল ছোট হয়ে যাওয়ার পরেও তারা দলবেঁধেই প্রতিদিন বাহিরে যেতো। এ-র কিছুদিন পর একটা ছাড়া বাকি সবগুলোকেও জবেহ করতে হলো। সবশেষে সেই একটি মুরগী-ই সঙ্গী বিহীন ঘুরতে গেলো। দিনশেষে রক্তাক্ত হয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে, কোনরকম জান নিয়ে মুরগীটি বাড়ী ফিরেছিল। তাকে একা পেয়ে নাকি কুকুর হামলে পড়েছে তার উপরে।

এই ঘটনা থেকে কী প্রতীয়মাণ হয় না? একতাবদ্ধভাবে থাকলে শক্তিবারে! শত্রুপক্ষ চাইলেও সহজে আক্রমণ করতে পারে না।
আর সবথেকে বড়কথা হলো ; যেখানে আমাদের আল্লহ এক, রাসূল (সাঃ) এক, কিতাবও এক! তাহলে কেন এতো ভিন্নতা।

অনৈক্য মুসলিম উম্মাহকে কুরেকুরে খাচ্ছে। যে উম্মাহ ছিল এক দেহের মতো, সেই উম্মাহ আজ শতভাগে বিভক্ত। ছোটখাটো ও অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিবাদে নিমজ্জিত। ফলে উম্মাহর শত্রুরা আজ আমাদের ওপর হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো মুসলিমদের অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে আমাদের ওপরই ছড়ি ঘুরাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানু্ষই এই ব্যাপারে বেখেয়াল ও অসচেতন। তারা তাদের আসল শত্রুকে ভুলে গিয়ে নিজেদের ভাইদেরকেই শত্রুর কাতারে বসিয়ে দিয়েছে। নিজেদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও সময়-শ্রমকে কিছু মতানৈক্যপূর্ণ মাসআলা-মাসায়েলের পেছনেই খরচ করে ফেলছে। নিজেদের সাধ্য-সামর্থ্যের যেই কামান তাক করার কথা ছিল নাস্তিক-মুরতাদ-মিশনারি-কাদিয়ানি-সেক্যুলার ও আধুনিক নানান মতবাদের ধারক-বাহকদের দিকে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার নল তারা ঘুরিয়ে দিয়েছে আপন ভাইদের দিকেই। এটি যে একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ও কর্মপ্রচেষ্টা আমাদের মনে সেই অনুভূতিকে জাগ্রত করতে এবং ফিকহী মতানৈক্যকে আপন স্থানে গন্ডিবদ্ধ রেখে মুমিন-মুসলিম হিসেবে পারস্পরিক হৃদ্যতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।
রাব্বে কারীম আমাদের সকল ভাইদের একত্রিত হওয়ার তৌফিক দান করুন। ভাই ভাইয়ের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিন। আমিন

অপেক্ষা করুন

0