উম্মতের ঐক্য-১০

“বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য যেন অকল্পনীয় এক বিষয়। ৯০% মুসলিমদের দেশে সকলে যেখানে এক উম্মাহর অংশ, পরস্পর ভাই-ভাই হওয়ার কথা; সেখানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে পরস্পর জড়িয়ে রয়েছে বিবাদে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র উঠানোর পরিবর্তে রুখে দাঁড়িয়েছে নিজেদেরই বিরুদ্ধে।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য রক্ষা করা ইসলামের একটি মৌলিক বিধান। উম্মাহ সেই বিধানকে পাশে ফেলে অতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বিষয় নিয়েও বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলে-উপদলে।

মুসলিম উম্মাহ তো এমন এক পরিবারের মতো যেখানে প্রত্যেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে-অপরকে ভালোবাসবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “” তোমরা ততদিন জান্নাতে যেতে পারবেনা যতদিন না একে অপরকে ভালোবাসছো””। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ ভালোবাসা তো কেবল এই সত্যের মাঝের নিহিত যে প্রত্যেকে একই কালিমায় বিশ্বাসী- “”লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ””। একই কালিমায় বিশ্বাসী হওয়া সত্তেও কেন পরস্পর ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বে ধরা দিয়েছে ফাটল? মানুষ সুন্নাহ, নফল ও মুস্তাহাব নিয়ে লিপ্ত হয়েছে দ্বন্দে। যা উম্মাহর ঐক্যকে ভেঙ্গে চুরমাড় করে দিয়েছে, দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। উম্মাহর ঐক্য ভঙ্গনে মুজতাহিদ ইমামগণকে ও তাদের সংকলিত ফিক্বহী মাযহাবগুলোকে টেনে আনা হয়েছে। অথচ এই মাযহাবসমূহের বিধি-বিধানগুলো কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই সংকলিত। সুন্নাহ অনুসরণ করা নিয়ে উম্মাহর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ সুন্নাহ অনুসরণ ও উম্মাহর ঐক্য রক্ষা উভয়টিই একই দ্বীনের বিধান। একটির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে যেয়ে আরেকটি পদতলে পিষ্ট হচ্ছে যা উপলব্ধি করার সক্ষমতা যেন আমরা জেদ ও হঠকারিতার বশে হারিয়ে ফেলেছি। শুধু আমারটাই ঠিক, বাকি সবারটা ভুল এই মানসিকতা থেকে আমরা বের হতে পারছিনা।

একদিকে যেমন মুসলিম উম্মাহর এক অংশ নিজেদের মাঝে বিভেদে লিপ্ত অন্যদিকে উম্মাহর এক বিরাট অংশ আজও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে চলেছে শতবছরেরও বেশি সময় ধরে। প্রতিনিয়ত আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা তাদের প্রাণ হাড়াচ্ছেন, মা-বোনেরা হচ্ছেন ধর্ষনের শিকার, শিশুরা হচ্ছে পিতৃ-মাতৃহারা। খেয়ে না খেয়ে অতিবাহিত করছেন বছরের পর বছর। আমরা আড়াই’শ কোটি মুসলিম হয়েও আজ নির্যাতিত এর কারণ অনৈক্য। আমাদের মাঝের অনৈক্য আমাদের দুর্বল করে ফেলেছে। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “” এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে এবং পরস্পর কলহ করবেনা, অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে(আনফাল:৪৬)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য না করে আমরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করি তাহলে আমরা দুর্বল হয়ে পড়বো এবং আমাদের প্রতি শত্রুদের ভয়ভীতি কমে যাবে। ফলে আমাদের বিজয় ও সফলতা অর্জন কঠিন হয়ে যাবে।

বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মুসলিমদের উপর বয়ে যাওয়া কষ্ট প্রত্যেক মুসলিমের নিজের। হাদিসে এসেছে “”এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য এক শরীরসদৃশ্। যদি এর একটি অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে এর প্রভাবে সারা শরীর ব্যথিত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়””(সহিহ মুসলিম)। এই অনুভূতিই একটি কারণ যে অত্যাচারে জর্জরিত মুসলিম ভাইবোনদের জন্য আমাদের সমগ্র উম্মাহর হৃদয় কাঁদে। এটিই বাংলাদেশের একজন মুসলমানের ফিলিস্তিনের মুসলমানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ।

বর্তমানে পুরো বিশ্বের মুসলিমদের শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে বের হতে নিজেদের মধ্যের সকল রেষারেষি ভুলে হতে হবে এক উম্মাহ। সকলে এক হয়ে জালিমদের বিরুদ্ধে তুলে ধরতে হবে তলোয়ার। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “”এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য দেয়ালস্বরূপ, যার একাংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে। অতঃপর তিনি তার হাতের আঙ্গুলগুলো প্রবিষ্ট করে দেখালেন””(সহিহ বুখারি)।

যেখানে আমাদের রব এক, রাসূল এক, সেখানে কিসের এতো দলাদলি ও বিভেদ? আমরা কি পারিনা নিজের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে এক উম্মতে পরিণত হতে? একজোটে রুখে দাঁড়াতে জালিমদের বিরুদ্ধে। খেলাফতের স্বপ্ন দেখা প্রত্যেক মুসলমান কি একে-অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আগাতে পারেনা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে?”

অপেক্ষা করুন

0