আমি আসিফ, মাদকে আসক্ত ছিলাম। দ্বীনের পথে এসেছি, আল্লাহ তায়লার হিদায়াতে। পড়াশোনা, ইবাদাত, দ্বীনের চর্চা করেই সময় যাচ্ছে।
এক শুক্রবারে, জুম্মার নামাযে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই বন্ধুদের দেখতে পেলাম তারাও নামাযে যাচ্ছে যাদের ত্যাগ করেছিলাম খারাপ সঙ্গ বলে। তাদের একজন আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে এবং টুকটাক কথা শেষে মসজিদে গেলাম এক সাথে।
নামায শেষে ইমাম সাহেব খুতবা দিচ্ছেন, সবাই বসে শুনছি, একসময়ে তিনি বলেন, “হে আমার শ্রেষ্ঠ নবী (সা.)-এর উম্মাতেরা, আমি কি আপনাদের এমন কিছু জানিয়ে দিবো, যার মাধ্যমে ১৪০০ বছর আগে না জম্নেও প্রিয় রাসুল (সা.)-এর সেবা করতে পারবেন?”
সবাই হ্যাঁ বললে তিনি বলেন, “আমাদের রাসুল (সা.) উম্মাতকে কি পরিমাণ ভালোবাসেন, তা কি সবার অজানা? তিনি (সা.) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উম্মাতের জন্য কান্না করেছেন, উম্মাতের ফিকির করেছেন, করেননি? আজ আপনারা হিদায়াত পেয়ে খারাপ সঙ্গ ছাড়ছেন, খারাপ অভ্যাস ছাড়ছেন, দ্বীন বুঝতে শুরু করেছেন, কিন্তু আপনার ঘরের মানুষ, প্রতিবেশী, বন্ধুমহল, এই সমাজে কতোদিন টিকে থাকবেন? আপনার কি দায়িত্ব নয় তাদের ছাড়ার আগে সতর্কবার্তা দেয়া? আপনি রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসেন, কিন্তু রাসুল (সা.) যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে, ‘হে তমুক, তুমি আমায় ভালোবাসলে আমার কষ্ট ফিকির কেন দেখলে না? আমার অনুপস্থিতিতে আমার উম্মাতকে কেনো সর্তক করলে না, এই তুমি আমায় ভালোবাসো?’ তখন কি বলবেন, আপনাদের কি উচিত নয় উম্মাতকে সতর্ক করা? রাসুল (সা.)-কে কি জবাব দিবেন?”
শেষের কথাটা যেনো বুকে এসে বিধলো, রাসুল (সা.)-কে কি জবাব দিবো? এই আমি তাঁকে ভালোবাসি?এই তাঁর কষ্ট আমাকে ব্যথিত করে? উনি (সা.) আমার সামনে এসে যখন জিজ্ঞেস করবেন, “হে আসিফ, কেন ছাড়লে উম্মাতদের, কেন তাদের কানে সতর্কবাণী পৌঁছালে না? হিদায়াত তো তোমার হাতে নয়, তবে কেন ছাড়লে, এই আমাকে ভালোবাসো?”
হায় আফসোস কি উত্তর দিবো তখন আমি। এর মধ্যে ইমাম সাহেব আবারও বললেন, “উম্মাতের ফিকির করুন, উম্মাতের কাছে সতর্কবাণী পৌঁছে দিন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়লা একমাত্র সাহায্যকারী, তিনি সৎদের সাথে আছেন। এই মাধ্যম রাসুল (সা.)-কে সেবা প্রদানের উত্তম মাধ্যম নয় কি?”
হ্যাঁ, উত্তম উপায়। খুতবা শেষে বের হয়েছি, এক বন্ধু বললো, “আসিফ, আমাদের একবারও সতর্ক করিসনি? আমরা কি তোর ভাই নই?”
অন্য একজন আমাকে জড়িয়ে ধরে, হু হু করে কেঁদে দিয়ে বললো, “ভাই আমার, আমায় সাহায্য কর, এই দুনিয়ার মোহে আর বাচঁতে চাই না, এতো পাপ কীভাবে মোচন করবো, ভাই আমার!”
আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাইলাম এবং দায়িত্ব নিলাম তাদের সঠিক দীক্ষা দিতে। তারাও হিদায়াতের আলোর দিকে এসেছিলো, পাপের অন্ধকার ভেদ করে। সেই থেকে আজ এক প্রতিষ্ঠান গড়লাম যার উদ্দেশ্য উম্মাহকে সঠিক দীক্ষায় দীক্ষিত করা। পরিশেষে যখন আমার প্রিয় রাসুল (সা.)-এর সামনে দাড়াবো, তখন যেনো গর্ব নিয়ে বলতে পারি, “দেখুন আমার হাবীব, আমার প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.) আমি আপনাকে ভালোবাসি, সত্যিই ভীষণ ভালোবাসি।”