“রাতের অন্ধকার নেমেছে যুদ্ধশিবিরে। সৈন্যরা ক্লান্ত, দিনের লড়াই শেষে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। চারপাশে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর দূরের বাতাসের হাহাকার।
কিন্ত, একটি তাঁবু থেকে হালকা শব্দ ভেসে আসছে।
মোমবাতির আলো টিমটিম করছে। সেখানে বসে আছেন এক মহান নেতা, সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়্যুবী।
তিনি সোনালি বর্ম পরেননি, রাজকীয় পোশাক পরেননি। বরং সাধারণ সাদা কাপড় পরে, কাঁপা হাতে ওযু করলেন। তারপর মাথা ঝুঁকিয়ে দিলেন মাটিতে।
দেখা গেলো এক অদ্ভুত দৃশ্য, তিনি ফিসফিস করে বলছেন, কাঁদছেন, আর কপাল ভিজছে অশ্রুতে।
“হে আল্লাহ, তুমি জানো, আমি এই যুদ্ধে কোনো গৌরব চাই না। আমি কোনো রাজত্ব চাই না, কোনো সোনাদানা চাই না। আমার একটাই আরজি, তুমি যেন এই উম্মতকে অপমান থেকে রক্ষা করো।”
তার চোখে তখন ভেসে উঠছে জেরুজালেমের চিত্র।
আল-আকসা, যে মসজিদ থেকে নবী ﷺ মেরাজে গিয়েছিলেন, আজ সেটি ক্রুসেডারদের হাতে বন্দি।
সেখানে আজ আজান শোনা যায় না, বরং শোনা যায় গির্জার ঘণ্টাধ্বনি।
তিনি আরও কাঁদতে থাকেন আর বলেন,
“হে আল্লাহ, আমি দুর্বল। আমি একা কিছুই পারি না।
কিন্তু তুমি যদি সাহায্য করো, তাহলে এই পতাকা আবার কেবল তোমার নামেই উড়বে।”
এভাবেই পুরো রাত সালাহউদ্দিন সিজদায় কাঁদতে থাকেন। সৈন্যরা জানে না কিছুই। তারা শুধু সকালে দেখে, তাদের নেতার চোখ লাল, মুখ দীপ্তিময়।
তার কণ্ঠ দৃঢ় হয়ে উঠেছে। তিনি সৈন্যদের উদ্দেশে বললেন: “ভয় পেও না! যদি আমরা আল্লাহর জন্য লড়ি, তবে আকাশ আমাদের সাথে ক্রুসেডারদের উপর নামবে।”
এবং সত্যিই তাই হলো! যে সালাহউদ্দিন রাতভর কেঁদেছিলেন, সেই সালাহউদ্দিন দিনের আলোতে এমন শক্তি হয়ে দাঁড়ালেন, যে বছরের পর বছর অদম্য ক্রুসেডার বাহিনীও তার সামনে ভেঙে পড়ল।
অবশেষে ৫৮৩ হিজরিতে (১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে), জেরুজালেম মুক্ত হলো। যেখানে রক্তপাত হয়েছিল, সেখানেই সালাহউদ্দিন ঘোষণা করলেন, “আজ কোনো প্রতিশোধ নয়, আজ শুধু ক্ষমা। আজ আল্লাহর উম্মতের জন্য স্বাধীনতার দিন।”
শিক্ষাঃ
এভাবেই এক রাতের সিজদা বদলে দিয়েছিল ইতিহাস।
একজন নেতার কান্না হয়ে গিয়েছিল উম্মতের বিজয়ের কারণ।
এবার প্রশ্ন হলো, আজ আমরা কি সালাহউদ্দিন আইয়্যুবীর মতো উম্মতের জন্য রাত জেগে কাঁদি? আমাদের দোয়া কি শুধু নিজের জন্য, নাকি উম্মতের জন্যও?
কেননা যে উম্মত রাতে আল্লাহর সামনে কাঁদে, সেই উম্মতকেই দিনে আল্লাহ দুনিয়ার সামনে সম্মানিত করেন।”