উম্মতের ফিকির ০৭

“””১৮শ শতাব্দীর দিল্লি। মুঘল সাম্রাজ্য তখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। চারপাশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন বাড়ছে, আর মুসলমানরা নিজেদের মধ্যেও নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ শুধু আচার-অনুষ্ঠানে ইসলাম মানছে, কেউ আবার কুসংস্কার ও ভ্রান্ত প্রথায় জড়িয়ে যাচ্ছে। ইসলামকে বিকৃত করে মানুষের অন্তরে ফিতনা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।

এই অস্থির সময়েই দিল্লির এক তরুণ আলেম মানুষের মন জাগ্রত করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিলেন। তাঁর নাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী। ছোটবেলা থেকেই তিনি কোরআন ও হাদীসের গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি বুঝলেন, মুসলমানদের এই দুর্দশার মূল কারণ হলো—কোরআন ও সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাওয়া।

একদিন দিল্লির একটি মসজিদে তিনি খুতবা দিলেন। মানুষ ভেবেছিল, হয়তো সাধারণ নসিহত হবে। কিন্তু তিনি এমন ভাষায় বললেন, যা সবার অন্তর কাঁপিয়ে দিল:
“”””ভাইয়েরা! ইসলাম শুধু নামাজ, রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম মানে হলো ন্যায়বিচার, ভ্রাতৃত্ব ও আল্লাহর দাসত্ব। যদি তোমরা বিভক্ত থাকো, যদি কুসংস্কারে ডুবে থাকো—তবে ইসলাম বিকৃত হবে, আর মুসলমানরা দুর্বল হয়ে পড়বে।””””

লোকেরা প্রথমে অবাক হলো। কেউ কেউ আপত্তিও তুলল। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর আন্তরিকতা, জ্ঞান ও ফিকির মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেল। তিনি নিজেই কোরআনের অনুবাদ ফারসিতে করে দিলেন, যেন সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারে। তিনি তরুণদের একত্র করে বললেন—“উম্মাহ এক দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে পুরো দেহ ব্যথিত হয়। তাই মুসলমানরা ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

শাহ ওয়ালীউল্লাহর এই প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে দিল্লির মুসলিম সমাজে নতুন জাগরণ শুরু হলো। কুসংস্কারের জায়গায় কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষা ফিরে এল। মানুষ বুঝল—ইসলামের শক্তি বিভাজনে নয়, বরং ঐক্যে।

তিনি হয়তো রাজা ছিলেন না, সেনাপতি ছিলেন না। কিন্তু তাঁর ফিকিরই মুসলিম উম্মাহকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলল। তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষা আজও ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে রাখছে।
এই কাহিনী আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ইসলামকে বিকৃতি থেকে বাঁচাতে চাই দৃঢ় ঈমান, আলেমদের ফিকির, আর উম্মাহর ঐক্যের চেতনা।”””

অপেক্ষা করুন

0