“রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কার কাফেরদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে যখন মদিনায় হিজরত করলেন, তখন সেখানে বিভিন্ন গোত্রের বসবাস ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আওস ও খাজরাজ গোত্র, যারা দীর্ঘকাল ধরে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ও যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিল। এছাড়া, সেখানে ইহুদিদেরও তিনটি প্রধান গোত্র ছিল—বনু কাইনুকা, বনু নাদির এবং বনু কুরাইজা।
রাসূল (সা.) মদিনায় এসে প্রথমে এখানকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করার উদ্যোগ নেন। তিনি আওস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা মিটিয়ে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন। এই দুই গোত্রের লোকজন একে অপরের সঙ্গে এতটাই মিশে গিয়েছিল যে তারা আনসার (সাহায্যকারী) নামে পরিচিতি লাভ করে।
এরপর তিনি মক্কা থেকে আগত মুহাজির (হিজরতকারী) সাহাবিদের সঙ্গে আনসারদের একটি অসাধারণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আনসাররা নিজেদের ঘরবাড়ি, সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। এমনকী, একজন আনসার সাহাবি তার অর্ধেক সম্পদ একজন মুহাজিরকে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। এই ঘটনা ইসলামে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
এভাবে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলিম, ইহুদি এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে একটি চুক্তিপত্র তৈরি করেন, যা মদিনার সনদ নামে পরিচিত। এই সনদের মাধ্যমে মদিনাকে একটি বহু-সম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেখানে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয় এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।”