“**হযরত আবুযর গিফারী (রা)এর এক অপরিচিত এবং হত্যার দন্ডপ্রাপ্ত আসামের জামিনদার হওয়ার ঘটনা।
keyword: “”কেয়ামত পর্যন্ত যেন কেউ বলতে না পারে, এক মুসলিমের বিপদে অপর মুসলিম করেনি “”( হযরত আবুযর গিফারি (রা))
এক যুবক হজরত উমর (রা.)-এর কাছে হাজির হয়ে তার অপরাধ স্বীকার করেন। তিনি জানান, একদিন তিনি ক্লান্ত হয়ে একটি খেজুর গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এবং ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার উটটি মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। পাশেই ছিলেন বৃদ্ধ এক ব্যক্তি, যিনি তার উটকে পাথর মেরে হত্যা করেছেন। এই ঘটনায় তিনি রাগের মাথায় বৃদ্ধকে পাথর দিয়ে আঘাত করেন, ফলে তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় খলিফা হজরত উমর (রা.) যুবককে মৃত্যুদণ্ড দেন। কেউ তার জামিনদার হতে রাজি হয়নি। তবে, মজলিসে উপস্থিত হজরত আবু যর গিফারি (রা.) যুবকের জামিনদার হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “”আমি হবো ঐ ব্যক্তির জামিনদার।”” এটি শুনে সবাই হতবাক হন, কারণ তিনি অপরিচিত এবং হত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর জামিনদার হতে চাচ্ছেন।
খলিফা হজরত উমর (রা.) যুবককে মুক্তি দেন এবং বলেন, “”আগামী শুক্রবার জুমা পর্যন্ত নওজোয়ানকে মুক্তি দেয়া হলো। জুম্মার আগে নওজোয়ান মদীনায় না আসলে নওজোয়ানের বদলে আবু জরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।”” যুবক মাইলের পর মাইল দূরে তার বাড়ির দিকে রওনা দেন। এদিকে, আবু যর গিফারি (রা.) নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন।
জুম্মার দিন এসে যায়, কিন্তু যুবকের কোনো খবর নেই। খলিফা হজরত উমর (রা.) রাষ্ট্রীয় পত্রবাহক পাঠিয়ে আবু যর গিফারির (রা.) কাছে পত্র পাঠান, যাতে উল্লেখ করা হয়, “”আজ শুক্রবার বাদ জুমা সেই যুবক যদি না আসে, আইন মোতাবেক আবু যর গিফারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।”” এটি শুনে মদিনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে।
এমন সময় এক সাহাবী উচ্চ স্বরে জল্লাদকে বলে উঠলেন, “”হে জল্লাদ, একটু থামো। মরুভূমির ধুলার ঝড় উঠিয়ে ঐ দেখ, কে যেন আসছে। হতে পারে ঐটা নওজোয়ানের ঘোড়ার পদধ্বনি।”” ঘোড়াটি কাছে আসলে দেখা যায়, সত্যিই এটি নওজোয়ান। তিনি দ্রুত খলিফার সামনে এসে বলেন, “”হুযুর, বেয়াদবি মাফ করবেন। রাস্তায় যদি ঘোড়ার পায়ে ব্যথা না পেতাম, তবে যথাসময়ে আসতে পারতাম। বাড়িতে গিয়ে আমি একটুও দেরি করি নাই। বাড়ি পৌঁছে গচ্ছিত আমানত ও ঋণ পরিশোধ করি। তারপর বাবা, মা এবং নববধূর কাছে সব খুলে বলে চিরবিদায় নিয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। এখন আমার জামিনদার ভাইকে ছেড়ে দিন আর আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে পবিত্র করুন। কেননা কেয়ামতের দিন আমি খুনি হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চাই না।””
এটি শুনে খলিফা হজরত উমর (রা.) যুবককে মাফ করে দেন এবং বলেন, “”তুমি ফিরে এসেছ, যাতে কেউ বলতে না পারে, এক মুসলমান বিপদে পড়েছিল, অথচ অন্য মুসলমান তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।”” এভাবে, হজরত আবু যর গিফারি (রা.)-এর জামিনদারিত্ব এবং যুবকের ফিরে আসা মদিনার সমাজে এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকে।
পরিচিত অপরিচিত সকলেই আমরা এক উম্মাহ। একজন আরেকজনকে বিপদে এগিয়ে আসতে হবে। এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা এই শিক্ষা পাই।
“